গর্ভধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ: Conceive করতে চান? গর্ভধারনের জন্য যেসব খাবার গুলো গুরুত্বপূর্ণ তা নিয়ে আজকে আমরা আলোচনা করবো। ২০২৪ সালের গবেষনা অনুযায়ী যেসব খাবার গর্ভধারনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তা নিম্নে দেওয়া হলো। ২০২১ সালে যুক্তরাজ্যে ডায়েট ও নারী প্রজনন সম্পর্ক বিষয়ক এক গবেষনার মূল্যায়নে বলা হয়েছে যে, নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য ডায়েট এবং পুষ্টিগ্রহনের ( foods To Get Pregnant) প্রক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ প্রজননের ক্ষেত্রে।
গর্ভধারণের জন্য যেসব খাদ্য গুরুত্বপূর্ণঃ
যেমনঃ আয়োডিন।আয়োডিন ভ্রুনের পরিপূর্ণ বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে এবং এটি মায়ের থাইরয়েড এর জটিলতা প্রতিহত করে। যাদের কোন ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে বা যাদের গর্ভধারণের জটিলতা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ডায়েট পরিকল্পনাটা ভিন্ন হবে। সেটি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী হবে। কিন্তু একজন সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষের ক্ষেত্রে ডায়েট পরিকল্পনা যেমন হতে পারে তা এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করব।
ফলিক এসিডঃ
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র “সিডিসি” এর তথ্য অনুযায়ী প্রজননের সক্ষম ব্যক্তিদের প্রতিদিন কমপক্ষে 400 মাইক্রোগ্রাম ফলিক এসিড গ্রহণ করা প্রয়োজন। ফলিক এসিড গ্রহণে ভ্রুনের মেরুদন্ডের গঠনের জটিলতা দূর হয়। এছাড়া এটি নারীদের গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ায় বলেও জানা যায়। সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড থাকে। তবে অনেক সময় শুধু খাবারের মাধ্যমে ফলিক এসিডের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হয় না। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ফলিক এসিডের সাপ্লেমেন্ট গ্রহণ করতে হবে।
প্রোটিনঃ
ইউনাইটেড হাসপাতালে ডায়েটিংক্স স্যানিটেশন বিভাগের প্রধান চৌধুরী তাসনিম হাসান বলেন, “ডিম্বাণুর মান বাড়াতে হলে গর্ভধারণের আগে আগে প্রোটিন খাওয়া বাড়াতে হবে।আর এগুলো হতে হবে ফাস্ট ক্লাস প্রোটিন। যেমন মাছ, মাংস, ডিম, দুধ। এগুলো প্রাধান্য থাকতে হবে। তবে কেউ যদি এগুলো যোগাড় করতে না পারেন তাহলে চাল-ডাল মিশিয়ে খিচুড়ি, শিমের বিচি, প্রতি বেলা খাবারের সাথে ডাল অবশ্যই রাখতে হবে।” এগুলো প্রোটিনের ভালো উৎস।
হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথ’ সাড়ে আট হাজার নারীর ওপর আট বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে দেখেছে যে, যারা রেডমেট বা মাংসের পরিবর্তে ডালের মত উৎস থেকে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে তাদের বন্ধ্যাত্ব ঝুঁকি কম থাকে।
আয়রনঃ
গর্ভধারণের সময় এবং গর্ভধারণের পরে যাতে শরীরে রক্তের ঘাটতি না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য অবশ্যই বেশি পরিমাণে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার মেন্যুতে রাখতে হবে পুষ্টিবিদরা বলছেন, বর্তমানে শুধু গ্রামে নয় বরং শহরাঞ্চলেও মায়েদের মধ্যে রক্তশূন্যতা দেখা যায়। আর এর প্রধান কারণ হচ্ছে আয়রনের অভাব।ড. চৌধুরী তাসনিম হাসান বলেন, “ভ্রূণের দেহটা তৈরি হয় মায়ের রক্ত থেকে, তার মায়ের কিছুতেই রক্তশূন্যতা যাতে না থাকে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।” রেডিমেট বা মাংস, বাদাম শুকনো ফলমূল এবং সবুজ শাকে প্রচুর আয়রন থাকে। গর্ভধারণের একদম শুরু থেকেই শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর গঠন শুরু হয়। এ কারণে খাবারের তালিকায় প্রতিদিন বাদাম রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ।
ভিটামিন সিযারা গর্ভধারণ করতে চান তাদেরকে অবশ্যই প্রতি বেলা খাবারের সাথে ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে এমন খাবার খেতে হবে। আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পর তা যাতে শরীরে শোষিত হয় তা নিশ্চিত করতেই ভিটামিন-সি দরকার। এজন্য প্রতিবেলায় খাবারের সাথে লেবু, কমলা বা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ যেকোনো খাবার রাখতে হবে।
ভিটামিন বি১২
গর্ভধারণের আগে ভিটামিন বি টুয়েলভ রয়েছে এমন খাবার তালিকায় রাখতে হবে। অর্গান মেজ বা কলিজা, সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি টুয়েলভ থাকে। এগুলো বেশি করে খেতে হবে।
চিনি
বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে মেয়েদের মধ্যে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেশি ধরা পড়ার প্রবণতা বেড়েছে। অনেক সময় দেহের ওজন কম থাকলেও রক্তে গ্লুকোজ ধরা পড়ে। এ ক্ষেত্রে সরাসরি চিনি খাওয়া কমিয়ে আনতে হবে। শর্করাজাতীয় খাবার খেলেও সেটি কিছুটা কমপ্লেক্স বা একটু জটিল কার্বোহাইড্রেট রয়েছে এমন খাবার খেতে হবে। যেমন সাদা চালের পরিবর্তে,লাল চালের ভাত খাওয়া, লাল আটার রুটি খাওয়া ইত্যাদি। খাবারের তালিকায় শাকসবজি বেশি রাখতে হবে। এটি রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। ফলে এটি গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে।
ভিটামিন ডি
গর্ভবতী নারী সহ প্রাপ্তবয়স্ক সবারই দিনে অন্তত 10 মাইক্রো গ্রাম ভিটামিন-ডি গ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়। এই ভিটামিনের প্রধান উৎস সূর্যের আলো। যারা বেশিরভাগ সময় ঘরে থাকেন কিংবা রোদের সংস্পর্শে যান না, তাদের আলাদাভাবে সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ভিটামিন-ডি গ্রহণ করতে হতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। পুষ্টিবিদরা বলছেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী খাবার খাওয়ার সাথে সাথে নিয়মিত শরীর চর্চা করাটাও জরুরি। কারণ শরীরচর্চা নারীদের হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায়।
গর্ভধারনের পর কি খাবেন?
পুষ্টিবিদরা বলছেন, নারীরা গর্ভধারণের পর মায়ের খাদ্যতালিকায় প্রোটিন বাড়ানো ছাড়া আর তেমন কোনো ভূমিকা নেই। ক্যালরির পরিমাণ বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই। বাচ্চার দেহ গঠিত হয় রক্ত মাংস এবং হাড় দিয়ে। অার রক্ত-মাংস হাড়ের জন্য প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ও মিনারেল দরকার হয়। এখানে ফ্যাট এবং কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ খুবই কম প্রয়োজন হয়। এজন্য খাদ্যতালিকায় কিছু স্বাস্থ্যকর ফ্যাট যেমন সামুদ্রিক মাছের তেল, বাদামের ফ্যাট, আঁশযুক্ত খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
বুদ্ধি বাড়ানোর জন্য প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ ধীরে ধীরে প্রায় দ্বিগুণ করে ফেলতে হবে। এসময় ক্যালসিয়ামের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে একজন গর্ভবতী নারীকে প্রথমদিকে দিনে দুই থেকে তিন গ্লাস এবং শেষের দিকে গিয়ে দিনে অন্তত চার দুধ খেতে হবে। তরল দুধনা খেলে ও দুগ্ধজাত খাবার যেমন টক দই, পনির, দুধের ছানা খাওয়া যেতে পারে। যারা দুধ খেতে পারেন না বা জোগাড় করাটা কষ্ট হয়, তারা দুধের মাছ খেতে পারেন। ছোট মাছের কাটায় প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। পোস্তদানায় প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে।
পুরুষরা কি করবেন?
নারীদের পাশাপাশি পুরুষদেরও খাদ্যতালিকায় নজর দেয়ার সুযোগ রয়েছে। পুরুষদের শুক্রানু স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে ভিটামিন-ই খুবই দরকারি। তাই ভিটামিন ই রয়েছে এমন খাবার পুরুষদের বেশি করে খেতে হবে। সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ই থাকে, সেগুলো বেশি পরিমাণে খেতে হবে। শুক্রাণু সবল রাখার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে প্রোটিন। এইসময় পুরুষদের ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া টা বাড়াতে হবে।
মাংসে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, গর্ভধারণের জন্য বা প্রজনন স্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য এককভাবে প্রভাব বিস্তার করবে এমন কোন খাবার বা সুপারফুড নেই বরং পরিকল্পিত ডায়েট এবং নিয়মিত খাবার খাওয়ার প্রক্রিয়া অনুসরণ করাটা জরুরি। তবে খাবার বা পুষ্টি এবং গর্ভধারণ ও প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকলে অবশ্যই একজন চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নে