Thursday, October 10, 2024
HomeLATEST NEWSমাইগ্রেন: কেন হয়? আপনি কী করতে পারেন?|আপনার স্বাস্থ্য

মাইগ্রেন: কেন হয়? আপনি কী করতে পারেন?|আপনার স্বাস্থ্য

জীবনে কখনো মাথা ব্যথা হয়নি, এমন কেউ কি আছেন? আমার মনে হয় না। তবে মাথাব্যথার একটা বড় কারণ হচ্ছে মাইগ্রেন। আজকের পর্বে আমরা জানবো মাইগ্রেন কি? কেন হয়? হলে কি করতে হবে এবং কিভাবে আপনি এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন মাইগ্রেন হচ্ছে মাথার?

মাইগ্রেণ হচ্ছে মাথার  একপাশে কম্পন দিয়ে মাঝারি ধরনের তীব্র ব্যথা। কখনো কখনো এই ব্যথা মাথার একপাশে শুরু হয়ে ধীরে ধীরে ওইপাশের পুরো অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।  ব্যথার সাথে সাথে কখনো কখনো দৃষ্টিবিভ্রম বা বমি বমি ভাব থাকতে পারে।  মাইগ্রেণ একটি সাধারণত রোগ।  প্রতি পাঁচজন নারীর মধ্যে একজন এবং প্রতি 15 জন পুরুষের মধ্যে একজন এই রোগে ভুগে থাকেন। 

সব মাইগ্রেন কি একই রকম হয়?

মাইগ্রেন বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে,, তবে মাইগ্রেন হওয়ার আগে আমাদের শরীর আমাদেরকে কিছু সতর্কবার্তা দেয়।  তার মধ্যে একটি হচ্ছে, চোখে হঠাৎ করে আলোর ঝলকানি দেখা,।তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই রোগে কোন পূর্ব লক্ষণ থাকে না।  এ ধরনের মাইগ্রেণই সবচেয়ে বেশি হয়।

আনার আরেক ধরনের মাইগ্রেন আছে যাকে বলা হয় সাইলেন্ট মাইগ্রেণ।  এসব ক্ষেত্রে পূর্ব লক্ষণ থাকলেও কোনো মাথাব্যথা থাকেনা।

মাইগ্রেনের উপসর্গ গুলো কি?

 মাইগ্রেনের উপসর্গ হচ্ছে, মাথার যে কোন একপাশে মাঝারি থেকে তীব্র ধরনের ব্যথা। এ ব্যথার সাথে অনেক সময় বমি বমি ভাব থাকতে পারে,।অনেকের এসব বিষয় ছাড়াও আরো কিছু উপসর্গ থাকে, যেমন ঘাম, মনোযোগহীনতা, অনেক বেশি ঠান্ডা বা অনেক বেশি গরম অনুভব করা, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া এগুলোর যেকোনো একটি যদি আপনি দেখতে পান বা আপনার যদি মনে হয় যে, এসব লক্ষণ আপনার মধ্যে আছে তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। 

মাইগ্রেণ কেন হয়?

 মাইগ্রেন সাধারণত কেন হয়? সেটি সঠিকভাবে জানা যায় না।  তবে কিছু কারণ আছে, যেগুলোকে মনে করা হয় যে এগুলো এই রোগে হওয়ার পেছনে অন্যতম ভূমিকা রাখে।  তার মধ্যে একটি হচ্ছে, মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রম যখন স্নায়ু ব্যবস্থা শরীরের রাসায়নিক উপাদান এবং রক্তনালীকে আক্রান্ত করে ফেলে, তখন এই ধরনের তীব্র ব্যথা মাথার একপাশে অনুভূত হয়। মনে করা হয় যে, এটি আসলে মাইগ্রেন তৈরির একটি বড় কারণ। মাইগ্রেনের আরেকটি কারণ হচ্ছে, হরমোনজনিত পরিবর্তন।

রিসেন্ট লাইভ খবর পেতে ফলো করুন আমাদের গুগল নিউজ চ্যানেল

চিকিৎসকরা বলেন, ঋতুস্রাবের সময় নারীরা বেশি এই রোগে ভোগেন। আবেগিয়  কারণও এর পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে। মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, হঠাৎ পাওয়া আঘাত, উত্তেজনা ইত্যাদি নানা কারণ থাকে, যা মাইগ্রেণ  পেছনে মাইগ্রেন হওয়াকে অনেক বেশি এগিয়ে নিয়েছে। শারীরিক বিভিন্ন কারণ রয়েছে মাইগ্রেনের পেছনে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, ঘুম কম হওয়া, শিফটে কাজ করা, হঠাৎ করে আপনি যদি অভ্যস্ত না থাকেন বেশি ব্যায়াম করার। সেটিও মাইগ্রেনের পেছনে একটি বড় কারণ হতে পারে।

এছাড়া আরও বেশ কিছু কারণ রয়েছে যেমন পরিবেশগত কারণ, আপনি যদি হঠাৎ করে গরম থেকে ঠান্ডা পরিবেশে বা ঠান্ড থেকে গরম পরিবেশে যান, সেক্ষেত্রে আপনি এই রোগে ভুগতে পারেন। এছাড়া আরও বেশ কিছু কারণ, যেমন আপনি যদি হঠাৎ করে অনেক বেশি আলো রয়েছে, এমন জায়গায় প্রবেশ করেন, সেটি আপনার মাইগ্রেন তৈরি হওয়ার পেছনে কাজ করতে পারে। আমরা কি খাচ্ছি? সেটি অনেক সময় মাইগ্রেন সৃষ্টিতে ভূমিকা পালন করে। খাবার-দাবারের অনিয়ম করা, পানিশূন্যতার ভোগা, মদ্যপান করা  চা বা কফি বেশি খাওয়া, এসব নানা ধরনের অনিয়ম মাইগ্রেন  হওয়ার পেছনে বেশ বড় ভূমিকা পালন করে।

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেনঃ

 যদি ঘন ঘন, তীব্রতর ভাবে মাথাব্যথা হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। ঘন ঘন মাথা ব্যথার সাথে যদি বমি হয়, সেক্ষেত্রে আপনাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে৷  আপনার যদি এই রোগে থাকে, তাহলে উচ্চমাত্রার ব্যথানাশক ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এটি সাময়িক আরাম দিলেও ধীরে ধীরে সময়ের সাথে সাথে এটি এই রোগে চিকিৎসাকে অনেক বেশি কঠিন করে তোলে।

এক মাসে যদি 5 বারের বেশি এই রোগে ব্যথায় ভোগেন, তাহলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের সহায়তা নিতে হবে। এছাড়াও আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ  উপসর্গ রয়েছে, যেগুলো দেখা দিলে অবশ্যই সাথে সাথে দেরি না করে হাসপাতালে যেতে হবে। 

তার মধ্যে একটি হচ্ছেঃ

হাতের যেকোন অংশ যদি প্যারালাইসিস হয়ে যায়, আপনি যদি দুর্বলতা অনুভব করেন তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। কথা বলার সময় যদি সেটা অস্পষ্ট হয় বা কথা যদি ভেঙে যায়, তখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।  এছাড়া মাথাব্যথা সাথে যদি তীব্র জ্বর থাকে, এর আগে হয়নি এমন তীব্র ধরনের মাথাব্যথা যদি হঠাৎ করে দেখা দেয়, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জ্বরের সাথে যদি মাথা ব্যথা থাকে, ঘাড় শক্ত হয়ে যায়, শরীরের র‍্যস দেখা যায়, এবং যদি রোগী সেসময় ডাবল ভীষণ দেখতে থাকে, তাহলে অবশ্যই দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিতে হবে। 

এই রোগে কিন্তু একেবারে হয়ে যায় না।এই রোগের বেশ কয়েকটি ধাপ থাকে। তার মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে, প্রডেমাল। প্রডোমালে মাথা ব্যথা শুরু হওয়ার আগে বেশ কিছু লক্ষণ থাকে, তার মধ্যে একটি হচ্ছে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, শরীরে শক্তি না পাওয়া, আচরণগত এবং ক্ষুধা নষ্ট হয়ে যাওয়া। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, ওরাধাপঃ এ ধাপে চোখে আলোর ঝলকানি দেখা, বা একেবারে চোখে না দেখা, এ ধরনের কিছু লক্ষণ থাকে। এই লক্ষণগুলো 5 মিনিট থেকে শুরু করে এক ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

 তৃতীয় ধাপ হচ্ছে মাথাব্যথা পর্যায়েঃ এ পর্যায়ে তীব্র মাথা ব্যথা থাকে, সেই সাথে আরো কিছু লক্ষণ যেমন অসুস্থতা বোধ করা, বমি বমি ভাব এবং আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা থাকে। এ ধরনের লক্ষণ 4 ঘন্টা থেকে শুরু করে ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত চলতে পারে। 

চতুর্থ পর্যায় হচ্ছে, রেজুলেশন ধাপঃএ ধাপে এসে মাথা ব্যথা আস্তে আস্তে কমতে থাকে, তবে শরীরে যে দুর্বল লাগা তৈরি হয়, এই ভাবটা বেশ কয়েকদিন ধরে চলতে থাকে।

মাইগ্রেনের চিকিৎসা কি?

 সহজ কথায় বলতে গেলে, মাইগ্রেনের আসলে সে ধরনের কোনো চিকিৎসা নেই। তবে চিকিৎসকের পরামর্শে থেকে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন মাইগ্রেন কে এড়িয়ে চলতে অনেকাংশেই সাহায্য করে।  বর্তমানে এই রোগের কোন প্রতিষেধক নেই। তবে এই রোগের বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি প্রচলিত আছে। তবে এগুলো সব সময় বেশ সময় সাপেক্ষ। এই রোগে থাকলে গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে আরো বেশি সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে।  তবে যে পর্যায়ে হোক, যেই হোক, এই রোগে চিকিৎসার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিমানের কাজ।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular