Thursday, October 10, 2024
HomeRecent Live BanglaIslamic Statusফেরাউনের পরিচয় | স্ত্রী সংখ্যা | বিয়ের পদ্ধতি

ফেরাউনের পরিচয় | স্ত্রী সংখ্যা | বিয়ের পদ্ধতি

আল্লাহর অবাধ্য হয়ে নিজেকে খোদা দাবি করেছিল মিশরীয় সভ্যতার ফেরাউন। ফেরাউনের একদল যাদুবিদ্যায়  পারদর্শী যাদুকরেরা  ফেরাউনের এ দাবির প্রচারভা ছড়িয়ে দেয়।  সেসময় ফেরাউনের তৃপ্তি বংশ মনে করতো যে,  যেহেতু একমাত্র তারাই খোদার বংশধর, তাই নিজেদের বংশের বাইরে তারা কাওকে বিয়ে করতো না। একারনে নিজ ভাইবোনদের মধ্যে তাদের বিয়ে হতো। ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্য এ তার স্ত্রী সংখ্যা ছিল ২০০ এর অধিক।

ইসলামের যে ইতিহাস সম্পর্কে এখন আমরা জানবো, ফেরাউনের ২০০ জন স্ত্রী এবং ভাই বোনের মধ্যে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার মত নিকৃষ্ট সমাজের চিত্র সম্পর্কে। মিশরীয় সভ্যতা পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতার অন্যতম একটি। নবী নূহ আঃ এর নাতি বীসার বিন হাম মহা প্লাবনের পর, গোত্রের ৩০ জন লোককে নিয়ে নীলনদের উপত্যকায় আগমন করেন এবং বর্তমান কায়রো থেকে ১৯ কিলোমিটার দূর “মানফ”নামক স্থানে বসতি স্থাপন করেন।

ফেরাউনের পরিচয়

বীসারের পুত্রের নাম মিশর। সে দীর্ঘজীবন লাভ করে এবং গোত্রকে সুসংগঠিত করতে সক্ষম হয়। তার কীর্তির কারণে তার নিয়ন্ত্রিত এলাকা মিশর নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। মিশরে বসবাসকারী অধিকাংশ লোক ছিল বিদেশী। তাদের মধ্যকার বড় বড় কয়েকটি বংশের নাম হল কিবতি, আমালেকা ও ইউনানি। তবে কিবতি বংশ ছিল তৎকালীন মিশরের সংখ্যাগরিষ্ঠ। আমালেকা বংশের কাছ থেকে ক্ষমতা দখল করে কিবতি বংশের ওয়ালিদ বিন মোস্তফা দ্বিতীয় রামেসীস, যাকে আমরা ফেরাউন বলে জানি। ক্ষমতা গ্রহণ করে দ্বিতীয় রামেসীস ফারাও বা ফেরাউন উপাধি ধারন করে।

এই উপাধি পরবর্তীতে তৎকালীন শাসকদের শৌর্য বীর্যের উপাধি হিসেবে পরিচিতি পায় এবং কিবতি বংশের ফেরাউন ক্ষমতা লাভ করে ব্যাপক নির্মাণ কাজ পরিচালনা করে ও সেনা বাহিনীকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলে। কিবতি বংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ হাওয়াই ফেরাউন ও ব্যাপক সমর্থন লাভ করে। এক পর্যায়ে নিজের ক্ষমতা গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা দেখে নিজেকে খোদা দাবি করে বসে ফেরাউন। ফেরাউন এর কিবতি বংশ নিজেদেরকে সূর্যের বংশধর মনে করত। আর যেহেতু ফেরাউন নিজেকে খোদা পরিচয় দিত। তাই তাদের মতে তারা খোদার বংশের লোক। তারা বংশের বাইরে কাউকে বিয়ে করত না। এখন বিয়ে করতে হলে উপায় হলো নিজেদেরই ভাইবোনদের মধ্যে বিয়ে সম্পন্ন করতে হবে। তাই তারা নিজেদের ভাইবোনের মধ্যে বিয়ে করত।

নীলনদ কেন্দ্র করে সভ্যতা গড়ে ওঠার কারণে গ্রীক ইতিহাসবিদ হেরোডোটাস মিশরকে নীলনদের দান বলে উল্লেখ করেন। সেই সময় নীল নদের তীরে বসবাসকারীরা দেবদেবীর পূজা ও সংস্কৃতি চর্চা করত। তাদের সংস্কৃতিতে সর্বাধিক জনপ্রিয় হলো-ফারাও বা ফেরাউনের মমি, তাদের পোষাক ছিল অতি বৈচিত্র্যময়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, তাদের পরিহিত মুকুট। তারা সাদা এবং লাল রঙের মুকুট পড়তো। মিশর থেকে উদ্ধারকৃত নর্মাল পালেট থেকে এই তথ্য মেলে। তারা ফারাও এর মৃত্যুর পরও বিশ্বাস করতো যে, ফারাও বেঁচে আছে।

ইতিহাসের কিছু সূত্র মতে, ফেরাউন অজিমান্ডিয়াস এবং রামেসিস উভয় নামে পরিচিত ছিল। বলা হয়ে থাকে, দ্বিতীয় রামেসিস ৯০ বছর বেঁচে ছিল। তার জন্ম আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৩০৩ এবং মৃত্যু ১২১৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। তার পিতার নামঃ প্রথম সেটি এবং মায়ের নাম রানী ভূঁইয়া। ১৪ বছর বয়সের দ্বিতীয় রমেশকে ভবিষ্যৎ রাজা হিসেবে নিয়োগ দেন। ঐতিহাসিকগণের ধারণা মতে, সে তার কৈশোরের শেষার্ধে সিংহাসনে রাজা হিসেবে অধিষ্ঠিত হয়।

ফেরাউনের স্ত্রী ও সন্তান

রামেসিসের শাসনকাল ছিল ১২৭৯ থেকে ১২১৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত। অর্থাৎ সে ৭৬ বছর কাল শাসন করেছে। দ্বিতীয় রামেসিসের জীবিত অবস্থায় প্রায় ২০০ এর উপরে স্ত্রী এবং উপস্থি ছিল। সন্তান ছিল ১১২ জন। যার মধ্যে ছেলে সন্তান ছিলেন ৯৬ জন এবং কন্যা সন্তান ছিল ১৬ জন। স্ত্রীদের মধ্যে প্রধান এর উপর পররাষ্ট্র কিছু দায়িত্ব থাকতো।

ফেরাউনের উন্নয়ন

দ্বিতীয় রামেসিসেকে মিশরের সাম্রাজ্যের সবচেয়ে মহান উদযাপিত ও সবচেয়ে শক্তিশালী ফারাও হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার সময়ে মিশর সাম্রাজ্যঃ সর্বাধিক প্রাচুর্য, সীমানা, সুরক্ষা, সামরিক বিজয়, ব্যবসার সুযোগ ও সমৃদ্ধি অর্জন করেছিল। তার রাজত্বকাল এর প্রথমার্ধের নগর,মন্দির এবং সৌধ নির্মাণ হয়েছিল। সেই সময় প্রাচীন মিশরের রাজধানী ছিল পেন্টাটিও। নগরের শেষ প্রান্তে ইহুদিদের বসতি ছিল। ফেরাউন নীল ডেল্টায় তার নতুন একটি রাজধানী এবং সিরিয়ায় তার অভিযানের প্রধান ঘাটি হিসেবে পায়রামিসিস নামে একটি নগরী ও স্থাপন করেছিল।

আধুনিককালের বিজ্ঞানীরা দ্বিতীয় রাজধানী এর সন্ধান পেয়েছেন। ২২৫ বর্গকিলোমিটারের প্রাচীন সেই মহানগর ছিল সৌন্দর্যমন্ডিত, আধুনিক, পরিকল্পিত নিরাপদ এবং সুখ সম্পদে পরিপূর্ণ এক রাজধানী। তার সময়ে ব্যবসায়ী, কবি-সাহিত্যিক থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত ও আরামপ্রিয় নাগরিকদের স্বপ্ন ছিল দ্বিতীয় রাজধানীর নাগরিক হওয়ার।

ফেরাউন বা রামেসিস নিজেকে খোদা দাবি করার পাশাপাশি নিজে এতো প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে ছিল যে, মিশরের বিভিন্ন রাজ্যের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে শিলালিপি বা বড় বড় পাথরে তার নাম উল্লেখ ছিল। তৎকালীন মিশর জাদু চর্চার জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। তার ক্ষমতা ও জনপ্রিয়তার পাশাপাশি অতি উৎসাহী জাদুকরদের সম্মিলিত প্রচার-প্রপাগান্ডা কারণে, সেই সময় বেশিরভাগ লোক বিশ্বাস করতে শুরু করে ফেরাউন সত্যিকার অর্থেই খোদা।

মূসা (আঃ) মজেজা ও ফেরাঊনের কাহিনী

ফেরাউনের এই মিথ্যা খোদা দাবী কে তাওহীদ নিয়ে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন, পয়গম্বর মুসা আলাই সাল্লাম। মুসা আলাই সাল্লাম এর আল্লাহ প্রদত্ত মজেজাকে ফেরাউন যাদু বলে অপবাদ দিয়ে ছিল। এক পর্যায়ে তার জাদুকরদের সাথে নবী মুসা আলাই সাল্লাম এর একটি প্রতিযোগিতায় হয়। জাদুকরদের জাদু দিয়ে সৃষ্টি করা সবগুলো সাপকে মুসা আলাই সালাম এর অলৌকিক লাঠি থেকে আল্লাহর হুকুমে সৃষ্ট বিশাল কায় সাপ গিলে খেয়ে ফেলে। এই ঘটনায় অনেক জাদুকর বুঝতে শুরু করে মুসা আলাই সাল্লাম এর মোজেজা বা অলৌকিক ঘটনা কোন যাদু নয় বরং তা আল্লাহর পক্ষ থেকে মোজেযা।

ফেরাউনের বিষয়ে তাওরাত, বাইবেল এবং পবিত্র কুরআনে বর্ণনায় এসেছে।ইসলামিক ইতিহাসবিদদের মতে, ফেরাউন রামেসীস এর পতনের প্রধান কারণ হলো রাজ্য ক্ষমতাসহ সর্বক্ষেত্রে সফলতা পাওয়ায় সে নিজের প্রাকৃতিক গঠন এবং পরিণতি সম্পর্কে উদাসীন হয়ে পড়েছিল। চরিত্রহীন, চাটুকার লোকদের সংস্পর্শ এবং ক্ষমতার দম্ভ তাকে প্রথমে মহামানব, তারপর অতি মানব, তারপর খোদা দাবী করার মত ঘৃণ্য পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যায়।

ফেরাঊনের জুলুম-নির্যাতন

ফেরাউন উপাস্যদের পাশে নিজের একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করেছিল। প্রথম দিকে তার নিরাপত্তা রক্ষী ও সৈন্য সামন্তরা তার ভাস্কর্যের উপাসনা করতে শুরু করে। পরবর্তীতে সমগ্র জাতি তাকে উপাসনা করতে শুরু করে। ইতিহাস অনুযায়ী সে জনগণের মধ্যে স্পষ্ট তিনটি পরস্পরবিরোধী সম্প্রদায় তৈরি করে সমাজে মারাত্মক জুলুম-নির্যাতন শোষণ ও বঞ্চনার এক নব অধ্যায় রচনা করে। যা তার পূর্ববর্তী সম্রাটরা কোনদিন করেনি। সে তার বংশীয় বা দলীয় লোকদের নাগরিক মর্যাদা দান করে এবং রাষ্ট্রীয় সামাজিক সুযোগ-সুবিধায় তাদেরকে খোদার প্রতিনিধিরূপে এসব অপকর্ম করার অনুমতি দেয়। সে সময় রামেশ্বর মিথ্যা খোদা হওয়ার বাসনা যারা সৃষ্টি করেছিল, তারা পুরো সাম্রাজ্যের বিরাট এক শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরি করে ফেলেছিল। এ সিন্ডিকেট সব ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়োগ-বদলি ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে রাষ্ট্রের মধ্যে আলাদা একটি রাষ্ট্র গড়ে তুলেছিল।

ইসলাম ইতিহাসবিদদের বর্ণনামতে, ফেরাউন দ্বিতীয় রামেসীস এর বৈষম্যমূলক রাষ্ট্রীয় নীতি, তার নিয়োগকৃত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি, এবং বহুমুখী পাপাচারের সমগ্র রাজ্যের খেটে খাওয়া সাধারন মানুষ এবং বিবেকবান ভালো মানুষগুলো জীবনে এক অন্ধকার নেমে আসে। অন্যদিকে, সুবিধাবাদী লোক আনন্দ উল্লাস, ধনীদের প্রাসাদসমূহ আয়োজিত জলসা, রাষ্ট্রীয় কর্মচারীদের সীমাহীন বিলাসিতা, রাজকোষের অর্থে নির্মিত শতশত মূর্তি, পিরামিড ইত্যাদি স্থাপনা এবং রাজ পরিবারের সব সদস্য এবং তাদের সেবকদের ভোগবিলাস ও অপব্যায় এর কারণে এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল, যেখানে দরিদ্র অসহায় মানুষেরা ছিল সবচেয়ে বঞ্চিত। সেই সময় সামাজিক বৈষম্য মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল।

ধনী ও দরিদ্রের মধ্যকার বৈষম্য জঘন্য পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। দরিদ্র দুর্বলদের কাছে যদি কোন আকর্ষনীয় বস্তু থাকত তা প্রকাশ্যে কেড়ে নেওয়া হতো। সে নারী শিশু বা যাই হোক না কেন। অন্যের সম্পদ প্রকাশ্যে কেড়ে নেওয়ার মধ্যে ক্ষমতাসীনরা এক ধরনের পাশবিক তৃপ্তি অনুভব করতো। বিচারব্যবস্থা সর্বদা ধনী ও ক্ষমতাবান দের পক্ষে ছিল। কিবতি জনগোষ্ঠীর লোক না হলে কেউ বিচারক, সেনাপতি জায়গীরদার বা গুরুত্বপূর্ণ, সরকারি কর্মচারী হতে পারত না। এই অবস্থায় নির্যাতিত লোকেরা বাকরুদ্ধও ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিল। এক পর্যায়ে নবী মুসা আলাই সাল্লাম এর সাথে বাড়াবাড়ি করলে নীলনদে আল্লাহর হুকুমে ডুবে মরে ফেরাউন এখনো তার লাশ মিশরের কায়রো জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular