প্রতি 10 জনের মধ্যে একজন জীবনে কোনো না কোনো সময়ে প্যানিক শিকার হন। যে কোন সময় কোন ধরনের উপসর্গ ছাড়াই প্যানিক অ্যাটাক হতে পারে। এটি যে কারোরই হতে পারে। কিন্তু প্যানিক অ্যাটাক আসলে কি?
প্যানিক হচ্ছে সেই পরিস্থিতি যখন আমাদের শরীর একই সাথে মানসিক এবং শারীরিক তীব্র উপসর্গে আক্রান্ত হয় এবং এর ফলে প্রচন্ড ভীত হয়ে পড়ে। প্যানিক অ্যাটাক হলে মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। সে দ্রুত নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। এবং এই অবস্থায় অনেকের মনে হতে পারে যে, তার হার্টঅ্যাটাক হচ্ছে।
প্যানিক অ্যাটাক কি?
অন্যান্য মানসিক সমস্যার মত প্যানিক সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ এখনও বোঝা সম্ভব হয়নি। তবে প্রাথমিকভাবে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ১.জীবনের কোনো মারাত্মক দুঃখজনক ঘটনা বা কোন ঘটনা যেমন গুরুত্বপূর্ণ কোনো বস্তু বা কাছের কোন ব্যক্তিকে হারানো।
২. পরিবারের ঘনিষ্ঠ কোন ব্যক্তি প্যানিক এ আক্রান্ত হলে মস্তিষ্কে নিউরোট্রান্সমিটার বার্তা প্রদানকারী রাসায়নিকের ভারসাম্য নষ্ট হলে প্যানিক হতে পারে।
কিভাবে বুঝবেন প্যানিক অ্যাটাক হচ্ছে?
প্যানিক অ্যাটাক ভীষণ ভীতকর এবং যন্ত্রণাময় হতে পারে। বৃটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্যানিক অ্যাটাকের লক্ষণ গুলো হচ্ছে,
১. হৃদস্পন্দন হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া।
২. অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার অনুভূতি হওয়া।
৩. প্রচন্ড ঘাম।
৪. বমি বমি ভাব।
৫. বুকে ব্যাথা।
৬. শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হওয়ায়।
৭. শরীর কাঁপতে থাকা।
৮. জরজর অনুভব হওয়া। ৯.শরীর হঠাৎ করেই ঠান্ডা হয়ে যাওয়া।
১০. হাত-পা কাঁপতে থাকা। ১১.মাথা ঘোরা
১২. অসারতা সুচ পোতার মত অনুভব হওয়া।
১৩. মুখ শুকিয়ে যাওয়া। ১৪.মলত্যাগের চাপ অনুভব করা।
১৫. কানে শব্দ হওয়া।
১৬. মৃত্যুর ভয় হওয়া।
১৭. পেটে অস্বস্তি হওয়া।
১৮. মনে হবে যে, শরীর নিয়ন্ত্রণে নেই।
বেশিরভাগ প্যানিক অ্যাটাক 15 থেকে 20 মিনিট দীর্ঘ হয়। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি এক ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। প্যানিক অ্যাটাক কতবার হবে সেটি নির্ভর করে আপনার মানসিক অবস্থা কতটা খারাপ তার উপর। অনেকের সারা জীবনে মাত্র একবার হয়, অনেকের মাঝে একবার দুইবার হয়, আবার অনেকের সপ্তাহে কয়েকবার হতে পারে। তবে প্যানিক অ্যাটাক ভীতিকর হলেও এটিই বিপদজনক নয়।
প্যানিক অ্যাটাকের শারীরিক কোনো ক্ষতি হয় না, যার কারণে হাসপাতালে ভর্তি করানো দরকার হয়না। তবে অনেক সময় এ ধরনের উপসর্গ অন্য কোন রোগের জন্য হতে পারে। যেমন রক্তচাপ কমে গেলে, হৃদস্পন্দন বেড়ে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি অলাভজনক একাডেমিক মেডিকেল সেন্টার ক্লিনিকের তথ্য অনুযায়ী, যদি কারো কোনো কারণ ছাড়াই অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অনবরত প্যানিক অ্যাটাক হতে থাকে, তাহলে সেই অবস্থাকে প্যানিক ডিজঅর্ডার বলা হয়। প্যানিক ডিজঅর্ডারে আক্রান্তদের অনেকেই বিভিন্ন ধরনের ফবিয়াতেও আক্রান্ত হতে পারেন। এক্ষেত্রে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
কিভাবে প্যানিক অ্যাটাক হয়?
প্যানিক অ্যাটাক হওয়ার সময় মানুষ তার শ্বাস প্রশ্বাস এর উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।এ সময় মানুষের দ্রুত গভীর শ্বাস নেয়ার চেষ্টা করে। অতিরিক্ত শ্বাস নেওয়ার প্রচেষ্টা বা হাইপারভেন্টিলেশন এর কারণে রক্তের কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা অত্যন্ত কমে যায়। অন্যদিকে অক্সিজেনের মাত্রা বেশি বেড়ে যায়। এতে মাথা ঘোরার অনুভূতি হয়। অতিরিক্ত গভীর শ্বাস নেয়ার কারণে, বুকে ব্যথা শুরু হতে পারে। কারণ এতে দেহের রক্ত নালী সংকোচিত হয়ে যায়। এ সময় অ্যাড্রেনালিন হরমোন নিঃসৃত হয়, যা হৃদপিন্ডের রক্ত সঞ্চালন এর কাজ বাড়িয়ে দেয়। আর এ কারণেই প্রচন্ড বুকে ব্যথা হয় বা হার্ট অ্যাটাকের মত অনুভূতি হয়। এর ফলে উদ্বেগ আরো বেশি বেড়ে যায়।
রিসেন্ট লাইভ খবর পেতে ফলো করুন আমাদের গুগল নিউজ চ্যানেল
অন্য কারো প্যানিক অ্যাটাক হলে আপনি কি করবেন?
কেউ প্যানিক অ্যাটাক এ আক্রান্ত হলে, তাকে সাহায্য করতে হলে তার সাথে কথা বলতে থাকতে হবে। নিশ্চিত হতে হবে যে তিনি আপনার কথা শুনতে পাচ্ছেন। তাকে তার শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করতে বলতে হবে। মুখ দিয়ে হা করে ধম নীতে থাকলে তাকে মুখ বন্ধ করে নাক দিয়ে শ্বাস নিতে বলতে হবে। দরকার হলে ঠোটের উপর আঙ্গুল রেখে ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে বলুন। ওই ব্যক্তির মনোযোগ অন্য কোন দিকে আকর্ষণ করতে বলতে পারেন। যেমন তার নিজের পায়ের পাতার দিকে মনোনিবেশ করতে বলা যেতে পারে।
প্যানিক অ্যাটাকের সময় কেও যদি দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে তাকে বসিয়ে দিতে হবে। এসময় হয়তো সে বেশ ক্লান্ত থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে তাকে পানি খেতে দেয়া বা তার নিজের মতো করে থাকতে দেয়া, কিছুটা বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ দেয়া কিংবা এক কাপ চা খেতে দেওয়াটাও তাকে শান্ত রাখতে সাহায্য করতে পারে।
প্যানিক অ্যাটাক আক্রান্ত হলে যা করবেনঃ
আপনার অনুভূতির কথা আপনি কারো সাথে শেয়ার করুন, বিশেষ করে কোনো বন্ধু বা পরিবারের কোনো সদস্য কিংবা স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী কোন ব্যক্তি অথবা কাউন্সিলরের সাথে শেয়ার করতে পারেন। নিয়মিত শ্বাস – প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে পারেন। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করুন, যেমন হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা, ইয়োগা করা ইত্যাদি। এগুলো আপনাকে স্বাভাবিক হতে সাহায্য করবে। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে। প্রতিদিনের খাবারে স্বাস্থ্যকর খাবার যুক্ত করতে হবে, যাতে এনার্জি লেভেল ভালো থাকে। একই ধরনের অভিজ্ঞতায় ভুগছে অর্থাৎ প্যানিক অ্যাটাকের আক্রান্ত অন্য মানুষদের সাথে মিশুন, তাদের অভিজ্ঞতার শুনুন। মানসিক প্রশান্তি আনে এমন বক্তব্য শুনতে পারেন।
প্যানিক অ্যাটাক আক্রন্ত হলে যা করবেন নাঃ
সব টার্গেট একসাথে পূরণ করার লক্ষ্য ঠিক করবেন না। বরং ছোট ছোট টার্গেট নির্ধারণ করুন, যা সহজেই অর্জন করা যায়। যে অবস্থার পরিবর্তন আপনি করতে পারবেন না, তার উপর ফোকাস করবেন না। বরং আপনি যাতে ভালো বোধ করেন সেটির উপর ফোকাস করুন। যে পরিস্থিতিতে আপনার উদ্বেগ বাড়ে, এমন পরিস্থিতি পুরোপুরি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন না বরং সেগুলোর প্রতি ধীরে ধীরে মানিয়ে নেয়ার সক্ষমতা বাড়ান। কখনোই নিজেকে বলবেন না যে, এমন অভিজ্ঞতা শুধু আপনার হচ্ছে বরং প্রতিটা মানুষের জীবনে কোনো না কোনো পর্যায়ে উদ্বেগ অনুভব করেন।
অ্যালকোহল সিগারেট জুয়া বা মাদক পরিহার করতে হবে। এর কারণে মানসিক অবস্থার অবনতি হয়, আপনার যদি ঘন ঘন প্যানিক অ্যাটাক হতে থাকে এবং কোন ধরনের চেষ্টাতেই কোনো উন্নতি না হয়, তাহলে দেরি না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত এ ধরনের নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের জন্য আমাদের ওয়েবসাইটে চোখ রাখুন।