Thursday, October 10, 2024
HomeHEALTH & FITNESSজরায়ু ক্যান্সার : কারণ, লক্ষণ এবং চিকিৎসা

জরায়ু ক্যান্সার : কারণ, লক্ষণ এবং চিকিৎসা

জরায়ু ক্যান্সার কে বলা হয় নীরব ঘাতক। কারণে অসুখ দেখা দিলে অনেক নারী এর লক্ষণ বুঝতে পারেন না। আবার ভিন্ন লক্ষণ দেখা দিলেও একে তেমন গুরুত্ব দেন না।

বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর 5 লাখ 70 হাজার নারী এ জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হন এবং প্রায় তিন লাখ 10 হাজার নারী জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আর 90% মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে নিম্ন মধ্যম ও আয়ের দেশগুলোতে। ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ওপ রিসার্চ ওব ক্যান্সার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রতিবছর নতুন করে 8,268 জন নারীর শরীরে শনাক্ত হচ্ছে জরায়ু ক্যান্সার। আর বছরে চার হাজার 971 জন নারীর জরায়ু মুখের ক্যান্সার এ মারা যাচ্ছেন। আক্রান্তের সংখ্যা থেকে বাংলাদেশের নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের পরেই এ জরায়ুর ক্যান্সারের স্থান। যদি আক্রান্ত নারীরা প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসার না করান, তাহলে তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা 50% কমে যায়। আর প্রথম থেকে চিকিৎসা করালে তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যায় 95%।

জরায়ু ক্যান্সারের কারণঃ

জরায়ু ক্যান্সারের মূল কয়েকটি কারণ এর মধ্যে রয়েছে,
১. অল্প বয়সে বিয়ে বা যৌন মিলন,
২. অপ্রাপ্ত বয়সে গর্ভধারণ ও অধিক সন্তান প্রসব করা।
৩. বহুগামিতা
৪. নিরাপদ যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতার অভাব।
৫. দীর্ঘদিন গর্ভনিরোধক ওষুধ সেবন,
৬. জরায়ুতে ভাইরাসের আক্রমণ।

হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসকে জরায়ুমুখ ক্যানসারের অন্যতম কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়। 100 টিরও বেশি প্রজাতির হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস বা এইচপিভি আছে। এর মধ্যে দুই ধরনের হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস এর কারনে এই জরায়ু ক্যান্সার হয়ে থাকেন এমনটাই বলছেন বিশ্লেষকরা। তবে ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশের পর পরই কিন্তু ক্যান্সার হয় না। গবেষক ও চিকিত্সকেরা বলছেন, জরায়ুমুখের ক্যান্সারের 15 থেকে 20 বছর সময় লাগে জীবাণু প্রবেশের পর ক্যান্সারটি হতে। তার মানে হলো এটি নির্ণয় অনেকটা সময় পাওয়া যায়। তাই নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের ওপর জোর দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

অন্য ধরনের ক্যান্সারের তুলনায় জরায়ুমুখের ক্যানসার কিন্তু খুব সহজেই নির্ণয় করা যায়। তবে জরায়ু ক্যান্সারের মূল সমস্যা হলো, এটি শেষপর্যায়ে গেলে শুধুমাত্র ব্যথা দেখা দেয়। আর এই ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কে অনেকেই পিরিয়ডের মেয়েলি সমস্যা বলে ভুল করে থাকেন। এমন ভুল যেন না হয়, সেজন্য লক্ষণগুলো মনে রাখা জরুরী।

জরায়ুমুখ ক্যান্সারের লক্ষণঃ

অনিয়মিত পিরিয়ড, তলপেটে চাপ চাপ বোধ বা তলপেটে তীব্র ব্যথা, পিরিওড পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও রক্তপড়া, বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য, খাওয়ার পর পেটে অস্বস্তি বা বমি ভাব বা বমি হওয়া, রক্ত ও বাদামের দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব বা সাদা দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব হওয়া, খিদে কমে যাওয়া ওক্লান্তি হওয়া, অতিরিক্ত ওজন বাড়া বা কমা, যৌন মিলনের সময় ব্যথা ও রক্তস্রাব ইত্যাদি। জরায়ুমুখের ক্যানসার নির্ণয় পরীক্ষার প্রাথমিক ধাপটি অত্যন্ত সহজ। সাধারণত দুটি টেস্ট করেই জরায়ু ক্যান্সার নির্ণয় করা সম্ভব।

রিসেন্ট লাইভ খবর পেতে ফলো করুন আমাদের গুগল নিউজ চ্যানেল

টেস্টগুলো হলোঃ
১.পেপ টেস্ট বা পেপ স্মেয়ার টেস্ট,
২.ভায়া টেস্ট।

পেপ স্মেয়ার টেস্ট যেভাবে করা হয়ঃ

জরায়ুর মুখ থেকে রস নিয়ে আণুবীক্ষণিক যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করা হয়, এ পরীক্ষা দিয়ে জরায়ু ক্যান্সার, ক্যান্সার হওয়ার পূর্ব্বাবস্থা ও জরায়ুমুখের অন্যান্য রোগ যেমন ইনফ্লাম্মেশন বা প্রদাহ শনাক্ত করা যায়। বিবাহিত নারীদের বিয়ের তিন বছর পর থেকে 64 বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি তিন বছর পর পর একটি পরীক্ষা করানো উচিত। মূলত 25 বছর বয়স থেকে 64 বছর বয়স পর্যন্ত পেপ টেস্ট তিন বছরে একবার করানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।

এছাড়া পেপ টেস্ট এর পাশাপাশি এইচপিভি টেস্ট করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ পরীক্ষা 21 বছরের আগে করা যাবে না এবং চিকিৎসকের পরামর্শেই পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন আসতে পারে।

ভায়া টেস্টঃ

অ্যাসিটিক অ্যাসিড তরল দিয়ে ভিজিয়ে জরায়ুমুখ সরাসরি দেখা হয় ভাই টেস্টে।এতে জরায়ু মুখের রং পরিবর্তন না হলে, ভায়া পজেটিভ হিসেবে চিহ্নিত হয়। তবে পেপ টেস্টে অস্বাভাবিকতা কিংবা ভায়া পজিটিভ হলে যে জরায়ু ক্যান্সার হয়েছে সেটা ভাবা ঠিক নয়। এরপর আরো পরীক্ষা, যেমন কলপোস্কপি দিয়ে পরীক্ষা, সন্দেহজনক স্থান থেকে বায়োপসি করে রোগ নির্ণয় করা হয়।

তবে চিকিৎসকের পরামর্শে এ পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন হতে পারে। বয়স যদি ৬৫ পেরিয়ে যায়, আর নিয়মিত পেপ টেস্ট এর শেষ দশ বছরের রিপোর্ট যদি স্বাভাবিক থাকে, তাহলে আর পেপ টেস্ট প্রয়োজন হয়না। বাংলাদেশের নারীদের মধ্যে দ্বিতীয় প্রধান ক্যান্সার জরায়ুমুখের ক্যানসার। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীরা যেন সহজেই এ জরায়ু ক্যান্সার স্ক্রিনিং এর আওতায় আসে সেজন্য নেওয়া হচ্ছে নানা ধরনের উদ্যোগ। চিকিৎসকেরা বলছেন, জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে নারীদের বছরে একবার করে পরীক্ষা করা উচিত। তবে পরপর দুইবার রিপোর্ট নেগেটিভ হলে তিন অথবা পাঁচ বছর পর পর পুনরায় পরীক্ষা করাতে হবে। আর ঝুঁকিপূর্ণ নারীদের তিন বছর পর পর পরীক্ষা করাতে হবে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যদি ক্যান্সার ধরা পড়েও, তবুও ভয় পাওয়ার কিছু নেই কারণ এই জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধে এখন একাধিক চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। যার মাধ্যমে অনেকাংশেই এ ক্যান্সার নির্মূল করা সম্ভব বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

জরায়ুর মুখ ক্যান্সারের প্রচলিত কয়েকটি চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে।
সেগুলো হলোঃ
১. সার্জারি,
২. রেডিওথেরাপি থেরাপি,
৩. ইমিউনোথেরাপি,
৪.কেমোথেরাপি,
৫. টার্গেটেড থেরাপি।

রোগটি যদি প্রাথমিক অবস্থাতেই ধরা পড়ে তাহলে অনেক সময় অপারেশনের মাধ্যমে জরায়ু কেটে ফেলে দেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। তবে দেরি হয়ে গেলে রোগ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এক্ষেত্রে কেমোথেরাপি, রেডিও থেরাপি দিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। এ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জরায়ুমুখের ক্যান্সারের টিকা পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ কিছু কারণে জরায়ু ক্যান্সার হবার প্রবণতা বেশি তাই টিকা ব্যবহার করে এর ঝুঁকি কমানো অনেকাংশে সম্ভব। বিশ্বের অনেক দেশে নয় থেকে 13 বছর বয়সীদের এই টিকা দেওয়া হয়। এনএইচএস ইংল্যান্ডের ভ্যাক্সিনেশন প্রোগ্রামের অধীনে 12 ও 13 বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের এইচপিভি টিকা দেওয়া হয়। সবচেয়ে বড় কথা হল, এই রোগ প্রতিরোধের জন্য আগাম সচেতনতা প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। কারণ একমাত্র আপনি সচেতন হলেই প্রতিকার করা সম্ভব।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular