গোল্ডেন ভিসা: মাঝেমধ্যেই সংবাদের শিরোনাম হবার বদৌলতে বেশ পরিচিত একটি নাম। সম্প্রতি স্পেন গোল্ডেন ভিসা ব্যবস্থা বাতিলের কথা ভাবছে। এমন খবর আসার পর নতুন করে আলোচনায় এটি। এ গোল্ডেন ভিসা আসলে কি? কিছুদিন পর পর এটি নিয়ে বিতর্কের কারণই বা কি?
গোল্ডেন ভিসাঃ
বড় অঙ্কের আর্থিক বিনিয়োগ এর বিনিময়ে একটি দেশের দ্রুততম সময়ে বিদেশী নাগরিকদের বসবাসের অনুমতি পাওয়ার একটি উপায় হলো গোল্ডেন ভিসা। অর্থাৎ বড় বিনিয়োগের বিনিময় অন্য দেশের ধনী ব্যক্তিদের বসবাস এবং কাজের অধিকার দেয় গোল্ডেন ভিসা। এর মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ধনী ব্যক্তিরা এই ভিসা প্রদানকারী দেশে আবেদন করে সেখানে কাজ করেন এবং ভোট দেওয়ার সুযোগ সহ নাগরিক হিসেবে সব ধরনের অধিকার ও স্বাধীনতা পায়।
গোল্ডেন ভিসার জনপ্রিয় গন্তব্যঃ
বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সাতটি দেশে গোল্ডেন ভিসা দেয়া হয়। যার মধ্যে প্রায় ২০টি দেশ বিনিয়োগের বিনিময় নাগরিকত্ব দেয়। এর মধ্যে অন্তত দশটি দেশ প্রতিবছর একশরও বেশি আবেদন পায়। তবে তুরস্ক নাগরিকত্বে সবচেয়ে বড় বিকৃত বলে জানান লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স এর রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান এর সহযোগী অধ্যাপক। বিশেষ করে মালয়েশিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো জনপ্রিয় গন্তব্যগুলোতে বিনিয়োগ কর্মসূচির মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি বসবাসের সুযোগ দেয়া হয় বলে জানান তিনি। গোল্ডেন পাসপোর্ট এর প্রধান ইস্যু কারীদের মধ্যে আরো আছে সেন্ট কিটস, ডোমিনিকা, ভানুয়াতু, গ্রেনাডা, অ্যান্টিগুয়া এবং মালটা। তবে গোল্ডেন ভিসা প্রার্থীদের জন্য সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য গুলোর একটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কমিটির সদস্য দেশে বসবাস এবং কাজ করার অধিকার পেলে সেনজেন রাজ্যগুলোতে ভিসা ছাড়াই ভ্রমনের অনুমতি পাওয়া যায়।
রিসেন্ট লাইভ খবর পেতে ফলো করুন আমাদের গুগল নিউজ চ্যানেল
এখানে একটু বলে রাখি, ভেনজন রাষ্ট্র বলতে ইউরোপের 29 টি দেশকে বোঝায়। যারা আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের নাগরিকদের জন্য সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ বাতিল করেছে।
গোল্ডেন চাহিদার এতো চাহিদার কারণ কি?
ভালো ব্যবসার সুযোগ, জীবনধারার, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা খোঁজা ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে গোল্ডেন ভিসা ও পাসপোর্ট বেশ জনপ্রিয়। অনেক বিনিয়োগকারী এ স্কীম বা ব্যবস্থাকে অন্য কোন জায়গায় নতুন জীবন শুরু করার কিংবা নিজ দেশে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি থেকে বাঁচার সুযোগ হিসেবে দেখেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক কোম্পানির বিপণন ব্যবস্থাপক বলেন, আজকের বিশ্বের সমস্ত অনিশ্চয়তার আগেই দ্বিতীয় আবাস বা পাসপোর্ট এর প্রয়োজনীয়তা কখনোই এতটা জোরালো ছিল না। বিভিন্ন কারণে বিনিয়োগে প্রবণতা থাকলেও নিরাপত্তা,ভীসামুক্ত ভ্রমণ এবং শিক্ষা ও ব্যবসার সম্ভাবনাসহ বৈশ্বিক সুযোগ বৃদ্ধি কে গোল্ডেন ভিসার জন্য আবেদন এর সাধারণ কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
আপনি কিভাবে গোল্ডপন ভিসা বা পাসর্পোট পাবেন?
ভিসা পাওয়া নির্ভর করে গন্তব্য এবং বিনিয়োগের ধরনের ওপর। যেমন বিদেশিদের মধ্যে যারা চার লাখ ডলার বা তার বেশি মূল্যের আবাসন কেনে তুরস্ক থেকে তাদের গোল্ডেন পাসপোর্ট অফার করা হয়। লুক্সেমবার্গের মত কিছু দেশ গোল্ডেন ভিসার জন্য বিভিন্ন ধরনের বিকল্প দেয়। এর মধ্যে রয়েছে লুক্সেমবার্গ এর কোন কোম্পানিতে কমপক্ষে পাঁচ লাখ 36 হাজার ডলার বিনিয়োগ থেকে শুরু করে কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দুই কোটি 14 লাখ ডলার জমা রাখা। মূলত স্থানান্তরের মাধ্যমে অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে সরকারগুলো এ ধরনের ব্যবস্থা চালু রাখে। এক গবেষণা অনুযায়ী, 2013 থেকে 19 সালের মধ্যে পর্তুগালের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের 14 দশমিক 4 শতাংশ এসেছে গোল্ডেন ভিসাট মাধ্যমে। লাটভিয়া অনুপাত ছিল 12 দশমিক 2 শতাংশ। আর গ্রীসের জন্য ছিল 7 শতাংশের বেশি।
এ স্কীমগুলো এতো বিতর্কিত কেন?
গোল্ডেন ভিসা জাতীয় স্কিম গুলো নিয়ে দুটি প্রধান উদ্বেগ রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো দুর্নীতি আর অন্যটি হলো স্থানীয়দের জন্য আবাসন সংকট। ইন্টারন্যাশনাল এ স্কীম গুলোর বিরুদ্ধে সতর্ক করে বলেছে সে ক্ষেত্রে আসলে বিনিয়োগ বা অভিবাসন মুখ্য নয় বরং এগুলো দুর্নীতিবাজদের স্বার্থ রক্ষা করছে। এ স্কীমগুলোর গুলোর মাধ্যমে অর্থ পাচার সম্ভব হলেও এর সহজ ও সস্তা বিকল্প রয়েছে বলে মনে করেন ডক্টর স্ট্রেঞ্জ। সে ক্ষেত্রে স্টুডেন্ট ও ব্যাবসায়িক ভিসার উদাহরণ টানেন তিনি। এছাড়াও আবাসন খাতের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়েও আছে উদ্বেগ। অনেক সুযোগ থাকলেও বেশিরভাগ আবেদনকারী বিনিয়োগের জন্য আবাসন খাত কেই বেছে নেন। ফলে বেড়ে যায় সম্পত্তির দাম। এক গবেষণা বলছে, বেশিরভাগ দেশেই এর প্রভাব সীমিত।
যেমন স্পেন প্রতিবছর প্রায় 2000 আবেদন গ্রহণ। তার মধ্যে চার কোটি 8 লাখ মানুষের দেশে 2000 আবাসন লেনদেন অত্যন্ত নগণ্য। কিন্তু বেশিরভাগ সময় আবাসন করার বিষয়টি পছন্দসই এলাকা কেন্দ্রিক।আরর বিদেশিদের মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু শহর এবং আশেপাশের এলাকার জনপ্রিয় হয় ওই জায়গার আবাসন খাত প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনাও স্বাভাবিকভাবেই বেশি।