গরমে বয়স্কদের স্বাস্থ্য: কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা তীব্র গরমে সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছেন বয়স্করা। এখানে বয়স্ক বলতে বোঝানো হচ্ছে যাদের বয়স 65 বছর বা তার বেশি। এর কারণ হলো বয়সের সাথে সাথে গরম সহ্য করার স্নায়তন্ত্র ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে আসে। এ কারণে দেখা যায় বয়স্ক রা তাপ প্রবাহের সময় স্ট্রোক, শ্বাসকষ্ট, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি থাকে। তবে তারা নিজেরা যদি সচেতন হোন এবং আশেপাশের মানুষ যদি তাদের ব্যাপারে যত্নশীল হন, তাহলে বয়স্করাও তীব্র গরমে সুস্থ থাকতে পারবেন। সে বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করব আমরা।এখানের সকল তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে বিভিন্ন মেডিকেল গবেষণা থেকে। লেখাটি আপনার পরিচিত বয়স্ক মানুষ বা তাদের আশেপাশে যারা থাকেন তাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। তাহলে তারাও গরম মোকাবেলা সম্পর্কে জানতে পারবেন।
গরমে বয়স্কদের স্বাস্থ্য সতর্কতা
পানিশূণ্যতা রোধঃ
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ এইচিং এর পরামর্শ হলো বয়স্কদের গরমের এই সময়ে যতটা পারা যায় আর্দ্র রাখা। এজন্য তাদের উচিত হবে সারাদিন প্রচুর পানি খাওয়ার। বয়স হলে তৃষ্ণা’র অনুভূতি ও আস্তে আস্তে লোপ পায়, তাই পিপাসার জন্য অপেক্ষা করা যাবে না,এমনটাই জানিয়েছেন ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক সেন্টার চিকিৎসকদের হাশমি।এসময় চা, কফি, কোমল পানীয় যতটা পারা যায় এড়িয়ে চলুন। ডায়াবেটিসের সমস্যা না থাকলে ঘরে বানানো তাজা ফলের রস খাওয়া খুব উপকারী। তবে বাড়তি চিনি মেলাবেন না। এগুলো খাবার আগে কিছু সময় ফ্রিজে ঠান্ডা করে নিলে ভালো লাগবে। আপনার বাড়িতে বয়স্ক কেউ থাকলে তাকে বারবার পানি খাওয়ার কথা মনে করিয়ে দিন। তার হাতের কাছে পানির ব্যবস্থা রাখুন। গরমে বয়স্কদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও সতর্কতা।
রিসেন্ট লাইভ খবর পেতে ফলো করুন আমাদের গুগল নিউজ চ্যানেল
খাবারঃ
গরমের সময় সুস্থ থাকতে বয়স্করা এমন খাবার খাবেন যাতে তেল-চর্বি মসলা খুবই সামান্য পরিমাণে থাকে। সেই সাথে মৌসুমী তাজা ফল ও সবজি যেমন আম, তরমুজ, আনারস, কমলা, শসা, টমেটো, এককথায় যেসব খাবারে পানির পরিমাণ বেশি সেগুলো বেশি বেশি খেতে হবে। ফলের রস খাওয়ার চাইতে ফল কামড়ে খাওয়ূর উপকারিতা বেশি।গরমে আরেকটি উপকারী খাবার হল টক দই। চাইলে ফলগুলো টুকরো করে কেটে তার সাথে টকদই মিলিয়ে সালাদের মত বানিয়ে খেতে পারেন। গরমে বয়স্কদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও সতর্কতা।
ঠান্ডা পরিবেশঃ
গরমে বয়স্কদের শরীর যতটা সম্ভব ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করুন। এজন্য বাড়ির সবচেয়ে ঠান্ডা ঘরে তাদের থাকতে দিন। অর্থাৎ যে ঘরে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করে। যদি জানালা দিয়ে সরাসরি রোদ পড়ে তাহলে দিনের বেলা ঐ জানালা বন্ধ রাখুন এবং হালকা রঙের মোটা পর্দা টেনে দিন। সূর্যাস্তের পর বাইরের আবহাওয়া যখন কিছুটা ঠান্ডা হয়ে আসবে তখন জানালা দরজা গুলো খুলে দিবেন। সম্ভব হলে বয়স্কদের ঘরে এয়ারকন্ডিশন বা এয়ার কুলার বসাতে পারেন। না হলে সিলিং ফ্যান এবং সাথে একটি টেবিল ফ্যান রাখতে পারেন। যে ঘরে বয়স্ক ব্যক্তি থাকবে সেখানে তাপ উৎপন্ন করে এমন জিনিস যেমন ল্যাপটপ, ওভেন,আইরন, মোবাইল ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। শরীর ঠান্ডা রাখতে বয়স্কদের উচিত হবে দিনে এক বা একাধিকবার ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করা। গরমে বয়স্কদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও সতর্কতা।
পোষাক বা ত্বকের যত্নঃ
গরমে বয়স্কদের পোশাকে চারটি বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে। পোশাকটি হতে হবে 100% সুতির, ঢিলেঢালা, পাতলা কাপড়ের এবং হালকা রঙের। বাইরে গেলে হাত পা ঢাকা পোশাক, মাথায় ছড়ানো টুপি এবং চোখে সানগ্লাস পড়ার চেষ্টা করবেন। আর অবশ্যই ছাতা সাথে রাখবেন। অনেকে মনে করেন সানস্ক্রিন শুধুমাত্র একটি প্রসাধনী। এই ধারণা একেবারেই ভুল। দিনের বেলা এবং ঘরের ভেতরে বা বাইরে তকে সানস্ক্রিন লাগাতে হবে। এটি ত্বকের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। গরমে বয়স্কদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও সতর্কতা।
ঘরে থাকুনঃ
এই গরমে সূর্য সবচেয়ে বেশি প্রখর থাকে বেলা এগারটা থেকে তিনটা পর্যন্ত। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল বলেছে, যে প্রবীণ ব্যক্তির রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় ভুগছেন, এমনকি তাদের কোন স্বাস্থ্য সমস্যা নেই তাদের জন্য এ গরম প্রাণঘাতী হতে পারে। তাই গরমে দিনের বেলা বাইরে বের হওয়া ঠিক হবে না। যদি বের হতেই হয় তাহলে একদম ভোরবেলা না হলে সূর্যাস্তের পর বের হতে পারেন। চেষ্টা করুন মানুষের ভিড় এড়িয়ে চলতে।
ভালো হয় যেখানে এসি চলছে সেখানে সময় কাটাতে পারলে। যাদের ব্যায়াম করার অভ্যাস আছে তারা রোদ কমার পর হালকা ব্যায়াম করতে পারেন। এক্ষেত্রে বেশি চাপ নেবেন না। এসময় বয়স্কদের রান্নাঘরে যেতে দেওয়া উচিত হবে না। তবে যারা রান্না করবেন চুলার কাজ অত অল্প সময়ে শেষ করবেন ততই ভালো। গরমে বয়স্কদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও সতর্কতা।
নিয়মিত স্বাস্থ্যঃ
পরিবারের অন্য সদস্যদের উচিত হবে বয়স্কদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা। এক্ষেত্রে বাড়িতে বসে রক্তচাপ, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ও ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা সম্ভব। বাজারে ব্যাটারিচালিত প্রেসার মাপার যন্ত্র, অক্সিমিটার, ডায়াবেটিস পরীক্ষার যন্ত্র পাওয়া যায়। সেগুলো হাতের কাছেই রাখুন। এসব স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অস্বাভাবিক কিছু থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। গরমে বয়স্কদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও সতর্কতা।
জরুরী অবস্থাঃ
অতিরিক্ত গরমের প্রভাবে হিটস্ট্রোক, হিট অ্যাকশন মারাত্মক দুর্বলতা, মাসাল্পুর এডেমা, মানসিক বিভ্রান্তি সহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে কোন রোগের লক্ষণ কেমন সেটা বয়স্কদের বুঝিয়ে দিন এবং লক্ষণ দেখা দিলে সাথে সাথে কি করতে হবে সেটিও জানাবেন। হিট স্ট্রোক রোগীর শরীর অনেক গরম হয়ে যায় এবং নিস্তেজ হয়ে পড়েন। অন্যদিকে হিট এক্সএকটনে শরীর থাকে ঠান্ডা। অতিরিক্ত ঘামের কারণে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হয়। ফলে পেশিতে টান খায়। গরমে অনেকের পায়ের পাতা ফুলে যায়।
সেইসাথে ক্লান্তিবোধ, মাথা ঘোরানো, বমি বমি ভাব, শরীরে লাল ফুসকুড়ি ওঠা, এগুলো গরমের সাধারণ সমস্যা। এসব সমস্যা বয়স্ক কারো দেখা দিলে সবার প্রথমে তাকে ঠান্ডা কোথাও নিয়ে শুইয়ে দিতে হবে। এসি ফ্যান চলছে অথবা ছায়াযুক্ত কোন জায়গা বেছে নিতে পারলে ভালো হয়। চেষ্টা করুন যতটা সম্ভব ঠান্ডা পানীয় খাওয়াতে। সেইসাথে পোশাক আলগা করে পানি ছিটিয়ে বারবার বাতাস করলে ঘারে বা বগলে বরফ দিয়ে রাখলেও শরীর ঠান্ডা হয়ে যাবে। সবচেয়ে ভালো হয় ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করিয়ে দিলে। এমনটা করলে সাধারণত 15 থেকে 20 মিনিটেই রোগী স্বাভাবিক হয়ে যান। তবে যদি আধাঘন্টা তেও কোনো পরিবর্তন না হয়, তাহলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। গরমে বয়স্কদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও সতর্কতা।
ঔষুধঃ
অনেক বয়স্ক ব্যক্তি আছেন যারা নিয়মিত ঔষধ খান।এমন কিছু ওষুধ আছে যা তাদের শরীরের তাপ এর প্রতিক্রিয়া কে প্রভাবিত করতে পারে। কিছু ওষুধ পানি শূন্যতার কারন হতে পারে বা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা নষ্ট করতে পারে। এসময় ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নেবেন, যে এই ওষুধগুলো খাওয়ার জন্য নিরাপদ কিনা। গরম আবহাওয়ার সময় ওষুধের ডোজ বা ওষুধ খাওয়ার সময় পরিবর্তন করার প্রয়োজন হতে পারে। গরমে বয়স্কদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও সতর্কতা।
যোগাযোগঃ
যেসব বয়স্ক ব্যক্তিরা একা থাকেন তাদেরকে অন্তত এটি শিখিয়ে দেবেন যে জরুরি পরিস্থিতিতে তারা যেন জরুরী ফোন নম্বরে ফোন করতে পারেন এবং প্রতিবেশীদের সাহায্য নিতে পারেন। এজন্য তাদের আশেপাশে যারা থাকে তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে সুসম্পর্ক বজায় রাখুন। আবার আপনার আশেপাশে একাকি কোন বয়স্ক ব্যক্তি থাকলে তার নিয়মিত খোঁজখবর নেয়া জরুরি। প্রয়োজনে হাসপাতালে নিতে হয় তাহলে কোন হাসপাতালে নিবেন, কীভাবে নেবেন সেটা আগে থেকেই ব্যাবস্থা করে রাখুন। এসব টিপস এর সাহায্যে বয়স্ক সহ সবার জন্য নিরাপদ ও আরামদায়ক দৃশ্য নিশ্চিন্ত করা যেতে পারে। এমন নানা ধরনের কনটেন্ট পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে। এ ছাড়া আপনার আর কি ধরনের কনটেন্ট পেতে চান সে বিষয়ে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। গরমে বয়স্কদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও সতর্কতা।