বায়ু ত্যাগ সাধারণ একটা বিষয়। সাধারণত প্রতিদিন 5 থেকে 15 বার একজন স্বাভাবিক মানুষ বায়ু ত্যাগ করেন। বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, দিনের নির্দিষ্ট সময়ে পেটে প্রচুর পরিমাণে গ্যাস থাকা ভালো স্বাস্থ্যের লক্ষণ। বায়ু ত্যাগ প্রমান করে আপনি সুস্থ এবং আপনার পরিপাক ক্রিয়া স্বাভাবিক আছে। যদিও মানুষ সাধারণত লোকলজ্জার ভয়ে প্রকাশ্যে বায়ু ত্যাগ করা থেকে বিরত থাকেন। অনেকে আবার অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতেও পড়েন। কিন্তু আপনি যদি এই বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়িয়ে চলতে পারেন, তাহলে কিন্তু প্রতিদিন বায়ু ত্যাগ করার বিষয়টি আপনার কাছে স্বাভাবিক মনে হবে।
যে খাবার গুলোর কারণে মানুষ বায়ু ত্যাগ করে সেগুলো হৃদপিন্ডের জন্য স্বাস্থ্যকর। ফাইবারযুক্ত জটিল কার্বোহাইড্রেট যেকোনো মানুষের শরীরের ভেতরে সহজে ভাঙতে পারে না, কিন্তু অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া সেগুলো ভাঙতে পারে সহজে। তাহলে কোন খাবার গুলোর কারণে মানুষ কোন খাবারের কারণে মানিষ বায়ু ত্যাগ করে? কোন খাবারের কারণে বায়ু দুর্গন্ধযুক্ত হয়? আর কোন পরিস্থিতিতে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত? চলুন কিছু খাবারের বিষয় সম্পর্কে জেনে নেই আজকে।
খাবারগুলোর কারণে মানুষ বায়ু ত্যাগ করে
চর্বিজাতীয় খাবার, বিভিন্ন ধরনের মাংস বিশেষ করে গরুর মাংসঃ
চর্বিজাতীয় খাবার খেলেই সেগুলো ধীরগতিতে হজম হয়। এসব খাবার আপনার অন্তরের জমা হতে অনেক সময় লাগে। চর্বিযুক্ত মাংস দ্বিগুণ কঠিন, কারণ এগুলো অ্যামিনো এসিড, মেথিওনিন সমৃদ্ধ। যাতে সালফার থাকে, মানুষের অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সালফার ভেঙ্গে হাইড্রোজেন সালফাইট এ পরিণত হয়, যেটা গন্ধ পচা ডিমের মতো। আর এরকম খাবার খেলে পাকস্থলীতে হাইড্রোজেন সালফাইট অল্প পরিমাণে জমা হয়। ফলে বায়ু নির্গত হয়, অনেক সময় সেটা দুর্গন্ধযুক্ত হয়।
বিনসঃ
বিভিন্ন ধরনের বিন, যেমন শিম ও ডালে প্রচুর ফাইবার থাকে। এছাড়াও র্যাফিনোজও থাকে, কমপ্লেক্স সুগার আছে যেটা ভালোভাবে প্রসেস করতে পারি না আমরা। এ চিনিগুলো অন্ত্রে যায়, শক্তির জন্য পাকস্থলী সেটা ব্যবহার করে। ফলে পাকস্থলীতে অতিরিক্ত বায়ু তৈরি হয়।হাইড্রোজপন, মিথেন এমনকি গন্ধযুক্ত উৎপন্ন হয়।আর এমন খাবার খেলে বায়ু নির্গত হওয়াটাই স্বাভাবিক।
ডিমঃ
অনেকেই মনে করেন ডিম বায়ু ত্যাগের কারণ নয়, কিন্তু বায়ু ত্যাগ এর অন্যতম কারণ হতে পারে এটা। কারণ ডিমে থাকে সালফার প্যাকড মিথিওনিন। সুতরাং আপনি যদি দুর্গন্ধ ছাড়া বায়ু ত্যাগ করতে চান বা উৎপাদনকারী অন্যান্য খাবার যেমন সিম বা চর্বিযুক্ত মাংসের সংঙ্গে ডিম খাবেন না। ডিম খেয়ে যদি আপনার শরীর ফুলে যায় বা শরীরে যদি শিরশির ভাব আসে তাহলে ধরে নিতে হবে আপনার হয়তো ডিমে এলার্জি আছে। ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
পেঁয়াজঃ
পেঁয়াজ, রসুন, ডাটা জাতীয় খাবার পেটে গ্যাস তৈরি করতে পারে। এর ফলে ও বায়ু নির্গত হয়।
দুঊ ও দুগ্ধজাত খাবারঃ
গরু, ছাগলের দুধে ল্যাকটোজ থাকে। আর এই চীনির কারণে পেটে গ্যাস তৈরি হতে পারে। বিশ্বের প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার প্রায় 65 শতাংশ মানুষের শরীরে ল্যূকটোজ সহ্য হয়না। এলার্জি থাকলে অনেকেই সেটা বুঝতে পারেন না। তাই দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার ফলে তাদের শরীর ফুলে যায় ও পেটে গ্যাস হয় বা অস্বস্তি বোধ তৈরি হয়।
গম ও শস্যজাতীয় খাবারঃ
গ্যাস তৈরির ফ্রুকটন ও ফাইবার পাওয়া যায় শস্যজাতীয় খাবারে। যেমন ওটস ও গমের পণ্যে। ফলে রুটি, পাস্তা এবং শস্যজাতীয় খাবার গুলো গ্রহন করার পর কিন্তু বায়ু নির্গত হতে পারে। এছাড়া গম, বার্লি এবং দানা জাতীয় গাছে রাইয়ে গ্লুটেন থাকে। আপনার যদি গ্লুটেনে এলার্জি থাকে, তাহলে গ্লুটেনের বেশি আছে এমন খাবার খাওয়ার পরে গ্যাস, শরীর ফুলে যাওয়া বা শারীরিকভাবে অস্বস্তি অনুভব করতে পারেন।
ব্রকলি, ফুলকপি ও বাঁধাকপিঃ
বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি সহ বিভিন্ন সবুজ সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। আর এই কারণে এসব সবজির হজম হতেও সময় লাগে। অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া শক্তির জন্য এসব ফাইবার ব্যবহার করতে ভালোবাসে। এই কারণে পাকস্থলীতে হালকা গ্যাস তৈরি হতে পারে। এছাড়া অনেক সবজিতে সালফারও থাকে।এসব খাবার খাওয়ার কারণেও হালকা দুর্গন্ধের বায়ু নির্গত হতে পারে।
ফলমূলঃ
আম, আপেল, নাশপাতির মতো ফলে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি থাকে। অর্থাৎ ফ্রুকটোস থাকে। এছাড়া আপেল, নাশপাতি তে ফাইবার থাকে অনেক। ফ্রুক্টোজ এর কারনে হালকা গ্যাস তৈরি হতে পারে অনেকের পাকস্থলীতে। যদিও ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতার বিষয়টা অনেক শোনা গেলেও ফ্রুক্টোজ এর ক্ষেত্রে তেমনটা শুনা যায়না।
বিব্রত পরিস্থতির কথা ভেবে কি বায়ু ত্যাগ করা বন্ধ রাখা যায়?
ফলমূল-সবজি সহ শস্যজাতীয় খাবার খেলে হালকা গ্যাস তৈরি হতে পারে। কিন্তু এসব খাবারের যে পুষ্টিগুণ আছে, সেগুলো মানুষের শরীরের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ফাইবার যুক্ত খাবার অর্থাৎ আঁশযুক্ত খাবার না খেলে নানাবিধ শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা একটা বড় সমস্যা। সুষম খাবার গ্রহণ করে শরীর সতেজ রাখার সবচেয়ে জরুরি। প্রত্যেক খাবারের পর পরিমাণ মত পানি খেলে শরীর সতেজ থাকে। এছাড়াও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন, খাবারের পর গ্রীন টি বা পুদিনা চা বা মসলাযুক্ত চা খাবার, যেন হজমে সুবিধা হয় এবং পাকস্থলীতে জমা থাকা হালকা বায়ু যেন নির্গত হয়ে যায়।
বিভিন্ন ধরনের পানীয়তে ও গ্যাস থাকে। আর এগুলো যদি বেশি পরিমাণে গ্রহণ করে তাহলে ঢেকুর উঠতে পারে বা বায়ু নির্গত হতে পারে। কোনভাবে বায়ু যদি আপনার পাকস্থলীতে জমে যায়, তাহলে তো তা ত্যাগ করতেই হবে।
বায়ু ত্যাগ করা নিয়ে কি আপনার উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত?
বায়ু ত্যাগ করা নিয়ে কি আপনার উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত? একদম নয় কিছু কিছু ক্ষেত্রে খাবার হজমের সময় বহু ধরনের গ্যাস পেটে তৈরি হয়। সেগুলো পেটে জমে থাকলে ক্ষতি। বরং সেগুলো যদি বেরিয়ে যায় তাহলেই লাভ। সে ক্ষেত্রে পেটে চাপ পড়লে নির্দ্বিধায় সেই গ্যাস বের করে দেওয়া উচিত। পেটে খাবার হজম করার কাজে সাহায্য করে যেসব ব্যাকটেরিয়া, তারা এই গ্যাসের অনেকটাই তৈরি করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যাদের একেবারেই গ্যাস হয়না, তাদের হজম প্রক্রিয়ায় কিছু সমস্যা থাকলেও থাকতে পারে। যারা খাবার খুব ভাল করে হজম করেন, পুষ্টিগুণ পুরো মাত্রায় গ্রহণ করেন তাদের পেটে বায়ু উৎপাদনের মাত্রা বেশি। তাদের বায়ু ত্যাগের পরিমাণও স্বাভাবিক। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে পেটে অতিরিক্ত গ্যাস তৈরি হওয়া শারীরিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। যদি অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা হয়, ও বিষয়টি আপনার মনে উদ্বেগ তৈরি করে, তাহলে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।