Sunday, October 13, 2024
HomeRecent Live BanglaIslamic Statusমদিনা শরীফের যে স্থানগুলো সবচেয়ে বেশি দেখতে যায় হাজিরা

মদিনা শরীফের যে স্থানগুলো সবচেয়ে বেশি দেখতে যায় হাজিরা

সরকারিভাবে মদিনা শরীফকে বলা হয় মদিনা ওয়াল মনোয়ারা।এটি হলো  আল মদিনা প্রদেশের রাজধানী ও সৌদি আরবের হেজাজ অঞ্চলের একটি শহর। যেখানে আমাদের মহানবি ( স.) এর রওজা শরীফ রয়েছে। মদিনা নানান ঐতিহাসিক  কারনে অত্যন্ত গুরিত্বপূর্ণ। মুসলমানদের কাছে  অনেক শ্রদ্বেয় ও পরবিত্র এ নগরীটি। এখানে রয়েছে ঐতিহাসিক ও ইসলামের প্রাচীনতম ৩ টি মসজিদ। এ মসজিদগুলো হলো মসজিদে নববী, কুবা মসজিদ, যা  ইসলামের ইতিহাসে সর্ব প্রথম মসজিদ ও আল কিবলাতাইন।মুসলমানদের কিবলা পরিবর্ত হয়েছিলে যে মসজিদে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৬২২ খ্রিস্টাব্দে সাহাবী আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সাথে নিয়ে পবিত্র মক্কা থেকে মদিনার উদ্দেশ্যে হিজরত করেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফতকালে সেই স্মৃতির উপর ভিত্তি করে ইসলামি বর্ষপঞ্জি প্রতিষ্ঠিত হয়। যা হিজরী সাল নামে পরিচিতি লাভ করে।

মদিনা শরীফে সূরা

রাসূল সাঃ মদিনায় হিজরতের পর যে সূরাগুলো নাযিল হয়েছিল সে গুলোকে আমরা মাদানী সূরা নামে চিনি। এর আরবি নাম আল মাদিনা। যার অর্থ শহর। ইসলামের আগমনের পূর্বে এই শহরটির নাম ছিল ইয়াসরিব।

আল কোরআনের সূরা আহযাবে ইয়াসরিব শব্দটির উল্লেখ রয়েছে। মদিনাকে আল মদিনা, আল নাবোবিয়া বা নবীর শহরও বলা হয়। মদিনার আবহাওয়া মরুভূমিময়, নভেম্বর থেকে মে মাসে সামান্য বৃষ্টিপাত হয়। বিশ্ব মুসলিমের প্রথম ইসলামী রাস্ট্র মদিনাতেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং পরবর্তীতে মদিনা কেন্দ্রিক নেতৃত্বের মাধ্যমে আল্লাহর দ্বীনকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল।

>> প্রিয় নবির রওজা

ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কেন্দ্রবিন্দু পবিত্র এই মদিনায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে গড়ে তোলেন মসজিদ। যা মসজিদে নববী নামে মুসলিম বিশ্বে খ্যাত। এই মাসজিদ চত্বরেই ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের ১২ ই রবিউল আউয়াল আমাদের প্রাণাধিক প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাতের পর তার স্ত্রী হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘরেই দাফন করা হয়। তার পবিত্র রওজা মোবারক থাকায় মদিনা শরীফ মুসলিম দুনিয়ার কাছে সম্মানিত একটি স্থান।

মসজিদে নববীতে নামাজ পড়লে যে বিশেষ সওয়াব পাবেন

এছাড়াও জাননাতুলবাকি, মসজিদে কেবলাতাইন, মসজিদে কুবা এবং অসংখ্য নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে নবীর শহর জুড়ে। হাজিরা হজ এর আগে বা পরে মদিনা শরীফ গিয়ে থাকেন। হাদিস শরীফে এসেছে মসজিদে নববীতে নামাজ আদায় করলে প্রতি রাকাতে ১০,০০০, ২৫,০০০ অথবা ৫০,০০০ রাকাত নামাজের সওয়াব হয়। মসজিদে কুবাতে দুই রাকাত নামাজ আদায় করলে এক ওমরার সওয়াব হয়।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি আমার মসজিদে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেছে, আর কোন নামায কাযা করেনি, সে মুনাফেকি থেকে মুক্ত হবে এবং দোযখের আযাব থেকে নাজাত পাবে”।

পবিত্র মক্কা শরীফের পরেই এটি শ্রেষ্ঠ স্থান। মক্কা শরীফ নামাজ আদায় করলে নিশ্চিত প্রতি রাকাতে ১,০০,০০০ রাকাতের সওয়াব হয়। মদিনা শরীফে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সমাধি অর্থাৎ মাকবারা অবস্থিত। একে রওজা মোবারক বা মাকবারা শরীফও বলা হয়। মদিনার সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ স্থান রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রওজা শরীফ। হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার হুজরার মধ্যে তাঁর পবিত্র রওজা শরীফ অবস্থিত। তারই পাশে হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর কবর। এটি বর্তমানে মসজিদে নববীর অন্তর্গত। মদিনা শরীফ নবীজির শহর শান্তিনগর।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে আমার রওজা জিয়ারত করলো তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেল। মক্কা শরীফের উত্তর দিকে হলো মদিনা শরীফ, তাই মদিনা শরীফের কিবলা দক্ষিণ দিক।

মসজিদে নববীর দক্ষিণ-পশ্চিম কোনার প্রবেশপথ কে বাবুস সালাম বলা হয়। মসজিদে নববীর দক্ষিণ-পূর্ব পাশের বহির্গমন দরজা কে বাবে জিব্রাইল বলা হয়। জিবরাঈল আলাইহিস সালাম ওহী নিয়ে এসে প্রায়ই এখানে অপেক্ষা করতেন। রওজা শরীফ এবং এর থেকে পশ্চিম দিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিম্বর পর্যন্ত স্থান হল, রিয়াজুল জান্নাত বা বেহেশতের বাগান। এটি দুনিয়াতে একমাত্র জান্নাতের অংশ । এই স্থানে স্বতন্ত্র রঙের ধূসর সাদাটে কার্পেট বিছানো থাকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার রওজা ও মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থানে বেহেশতের একটি বাগিচা বিদ্যমান। খলিফা হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু দোয়া করতেন, “হে আল্লাহ আমাকে আপনার পথে শহীদ হওয়ার সৌভাগ্য দান করুন, এবং আপনার রাসূল (সাঃ) এর শহরে আমাকে মৃত্যু দিন”।

পবিত্র মদীনা শরীফে স্মৃতিবিজড়িত ৬টি মসজিদ রয়েছে, মুসলিম উম্মার সর্বোচ্চ পবিত্র ও ভালোবাসার স্থান রাসূলের রওজা, মসজিদে নববী, সবুজ গম্বুজ সহ মদিনায় অবস্থিত মসজিদ গুলো। মসজিদে নববী ছাড়াও রয়েছে, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্মৃতিবিজড়িত অনেক মসজিদ। যার অনেক মসজিদে নামাজ আদায়ের রয়েছে বিশেষ নেকি ও ফজিলত।

মিকাত মসজিদ

মদিনা মনোয়ারা থেকে মক্কা মুকারমায় যাওয়ার পথে মসজিদে নবমী থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে আকিক উপত্যকার পশ্চিম পাশেই এই মসজিদটি অবস্থিত। এটি মদিনাবাসীর জন্য মিকাত হওয়ায় মসজিদে মিকাত নামে পরিচিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ বা উমরা পালনের উদ্দেশ্যে মক্কা যাওয়ার সময় এই জায়গায় একটি গাছের নিচে নামতেন এবং সেখানে সালাত আদায় করে ওমরা অথবা হজের ইহরাম বাঁধেন। এই কারণে এটিকে মাসজিদে সাজাড়াও বলা হয়।

মসজিদে জুম’আ

হিজরতের সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রানুনা উপত্যকায় ১০০ সাহাবাকে সঙ্গে নিয়ে প্রথম জুমার নামাজ আদায় করেন। পরবর্তীতে এই স্থানে মসজিদ নির্মাণ হয়। আজকের পৃথিবীতে যা মসজিদে জুম’আ নামে পরিচিত।

মসজিদে কুবা

মদিনা শরীফ আগমন করে সর্বপ্রথম যে স্থানে নামাজ আদায় করেন, তার নাম কুবা। পরবর্তীতে এই স্থানে মাসজিদ গড়ে ওঠে। যা মসজিদে কুবা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

মসজিদে কিবলাতাইন

যে মসজিদে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দীর্ঘ প্রতিক্ষা এবং আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছিল। এই মসজিদ বায়তুল মুকাদ্দাসের পরিবর্তে পবিত্র কাবা শরীফ কেবলা হিসেবে নির্ধারিত হয়েছিল। এখনো সেই মাসজিদে দুই দিকে দুটি মেহরাব বিদ্যমান রয়েছে।

মসজিদে গামামা

মসজিদে নববীর দক্ষিণ-পশ্চিম কোনে অবস্থিত মসজিদে গামামা। মদিনাই প্রথম ঈদের নামাজ পড়া হয় এই মসজিদে। এই স্থানে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়েছেন বলে এটিকে মসজিদে গামামা বলা হয়। প্রিয় নবীর শেষ জীবনের ঈদের নামাজ গুলো এখানেই আদায় করেন। এই মসজিদ থেকে মসজিদে মুসাল্লাও বলা হয়।

মসজিদে আবু বকর

ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফত কালে তিনি এই মসজিদে ঈদের নামাজ পড়ান। তাই এটি মসজিদে আবু বকর নামে পরিচিতি লাভ করে। যা মসজিদে গামামার উত্তরে অবস্থিত। এছাড়াও মদিনায় আরো কয়েকটি মসজিদ রয়েছে।

উহুদ পর্বত

মদিনা শরীফে আরো একটি অন্যতম পবিত্র স্থান ওহুদ পর্বত। যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নেতৃত্বে, মুসলিম বাহিনীর মক্কার সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। এই পর্বতটি প্রায় সাড়ে তিন হাজার ফুট উঁচু এবং যুদ্ধক্ষেত্রটি পাহাড়ের চূড়া থেকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায় । পাহাড়ের নিকটেই ওহুদের শহীদদের কবর স্থান। যেখানে যুদ্ধে নিহত শহীদ মুসলিম সৈন্যদের মধ্যে ৮৫ জন কে দাফন করা হয়েছে।

মর্যাদার দিক থেকে দ্বিতীয় স্থান দখল করে আছে মদিনা শরীফ। প্রথম প্রথম স্থানে আছে পবিত্র কাবা শরিফ। যদিও হজের অংশ নয় মদিনার জিয়ারত, তারপরেও বিভিন্ন কারণে অধিকাংশ মুসলমানের কাছে মদিনার ভালোবাসা অনেক বেশি। তাই হজযাত্রীরা মদিনার সফর ও জিয়ারত মিস করেন না।

ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ ও স্মৃতিবিজড়িত স্থান হলো প্রবিত্র মদিনা শরীফ। আজন্ম পর্যন্ত এ স্থানগুলোর প্রতি মুসলিম উম্মাহর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা থাকবে। যা এভাবে চলতে থাকবে কে

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular