Monday, September 16, 2024
HomeRecent Live BanglaHEALTH TIPS BANGLAতীব্র গরমে যেসব অসুখ হয় এবং সেগুলো থেকে রক্ষা পেতে যা করবেন

তীব্র গরমে যেসব অসুখ হয় এবং সেগুলো থেকে রক্ষা পেতে যা করবেন

তীব্র গরমে যেসব অসুখ হয়: ইদানিং দিনের বেলা বাইরে গেলে মনে হয় তীব্র রোদে চামড়া পুড়ে যাচ্ছে, মুহূর্তে ঘামে ভিজে একাকার। একদম হাঁসফাঁস অবস্থা যাকে বলে। ঘরের ভেতরেও স্বস্তি নেই। বৈশাখ মাস এবং তার পরবর্তী কয়েক মাসে গরম পড়বে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু গাছপালা জলাশয় কমে যাওয়া আর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখনকার গরম অসহনীয় হয়ে উঠছে। অর্থাৎ শরীরে তাপমাত্রার সাথে আর খাপ খাওয়াতে পারছে না। এমনিতে আমাদের শরীরএকটা চমৎকার ছন্দে কাজ করে। যদি আবহাওয়া বেশি ঠান্ডা হয় তাহলে শরীর চর্বি ও খাবার থেকে তাপ উৎপন্ন করে শরীর গরম রাখে, আবার তাপমাত্রা অনেক বেড়ে গেলে শরীরকে ঘামিয়ে শরীরকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করে। কিন্তু গরম যদি মাত্রা ছাড়িয়ে যায় তখন শরীরকে বাড়তি কাজ করতে হয়।

যেমন ত্বকের কাছাকাছি রক্তনালীগুলো এ তাপ ছড়িয়ে দিতে বেশি শ্রম দেয়। এভাবে রক্তনালীগুলো যখন খুলে যেতে থাকে, তখন রক্তচাপ কমে যায়। এ সময় শরীরের রক্ত সঞ্চালন করতে হৃদপিণ্ডকে খুব দ্রুত রক্ত পাম্প করতে হয়।হৃৎস্পন্দন এতটাই বেড়ে যায় যেতে হার্ট অ্যাটাক পর্যন্ত হতে পারে। গরমের কারণে শরীর কে যে অতিরিক্ত শ্রম দিতে হয়, অনেক সময় শরীর সেই বাড়তি চাপ নিতে পারে না তখনই বাঁধে নানা রোগব্যাধি। আজকে আমরা গরম এমন তিনটি রোগ নিয়ে কথা বলব।এসব অসুস্থতা থেকে নিজেকে কিভাবে সাবধানে রাখবেন বা আক্রান্ত হলে সেরে উঠবেন কিভাবে সে বিষয়ে জানতে পারবেন। এখানকার সব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ থেকে।

তীব্র গরমে যেসব অসুখ হয়

তীব্র গরমে যেসব অসুখ হয়

হিটস্ট্রোকঃ

 তীব্র গরমে মানুষের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। মানুষের শরীরের তাপমাত্রা যখন স্বাভাবিকের চাইতে বেড়ে যায় অর্থাৎ স্বাভাবিক অবস্থায় মানব দেহের তাপমাত্রা 98 দশমিক 6 ডিগ্রি ফারেনহাইট থাকে। কিন্তু গরমে সেটা যদি 104 ডিগ্রি ফারেনহাইট এর চেয়েও বেশি বেড়ে যায়, তখন শরীর স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। অর্থাৎ ঘাম হয়ে যে শরীর ঠান্ডা হবে সেটা কাজ করে না। এতে হিট স্ট্রোক হয়। আবার অনেকক্ষণ টানা ঘেমে যাওয়ার পর পানিশূন্যতা থেকেও হিট স্ট্রোক হতে পারে।

রিসেন্ট লাইভ খবর পেতে ফলো করুন আমাদের গুগল নিউজ চ্যানেল

হিটস্ট্রোক বুঝতে পারার কয়েকটি সাধারণ লক্ষণ আছে, যেমন তীব্র গরমে ব্যক্তি তেমন একটা ঘামবেন না, চামড়া শুষ্ক, লালচে ও গরম হয়ে যাবে। হৃদ স্পন্দন বেড়ে যাবে। ভীষণ দুর্বলতা থেকে ব্যক্তি ঝিমোতে থাকবেন। কেউ কেউ অচেতন হয়ে পড়তে পারেন বা প্রলাপ বকতে থাকে। আবার অনেকের খিঁচুনি হয়।

এমন লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে তার শরীরের তাপ কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে। প্রথমে তাকে রোদ থেকে দূরে ছায়া ও বাতাস যুক্ত জায়গায় নিয়ে যেতে হবে।

 সবচেয়ে ভালো হয় যদি রোগীকে এসি চালানো আছে এমন জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়। এছাড়া রোগীকে ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করিয়ে দিলেও কাজ হবে। চেষ্টা করুন যতটা সম্ভব ব্যক্তির কাপড় আলগা করে শরীর ঠান্ডা পানিতে মুছে, জোরে জোরে বাতাস করতে। সেই সাথে ঠান্ডা পানি বা যেকোনো ঠান্ডা পানীয় খাওয়াতে হবে। কাপড়ে  বরফ মুরে ঘাড়ে বা বগলে মুড়ে রাখলেও শরীর দ্রুত ঠান্ডা হবে। সময়মতো তাপমাত্রা স্বাভাবিক করা না গেলে হিট স্ট্রোক থেকে অনেকে পঙ্গু হয়ে যেতে পারেন, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। তবে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিলে রোগী 10 /15 মিনিট পরে স্বাভাবিক হয়ে থাকেন। তীব্র গরমে যেসব অসুখ হয়

যদি দেখেন এত ব্যবস্থা নেয়ার আধা ঘণ্টা পরেও রোগী  স্বাভাবিক হচ্ছে না, তাহলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। হিটস্ট্রোকের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন শিশু ও বয়স্করা। বা যাদের বয়স 65 বছরের বেশি। কারণ শিশুদের এমন চরম তাপের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার মতো স্নায়তন্ত্র বিকশিত হয় না। আর বয়স্কদের ক্ষেত্রে স্নায়তন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে। আবার তরুণ বয়সে যদি দীর্ঘসময় রোদের মধ্যে থাকেন, কাজ করেন তাদেরও হিট স্ট্রোক হতে পারে।  আবার ঘরের ভেতরে আছেন কিন্তু ঘর ঠান্ডা করার মতো কিছু নেই, সেখানেও হিট স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি থাকে। স্থূলতা, হার্টের রোগ, ডায়াবেটিসে ভুগছেন এমন মানুষও হিটস্ট্রোকের ঝুঁকিতে থাকেন, তাদের বয়স যাই হোক না কেন। তীব্র গরমে যেসব অসুখ হয়

ডায়রিয়াঃ

 ডায়রিয়া সারাবছরের রোগ হলে। গরমের মৌসুমে এর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। কারণ গরমের সময় খাবার দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়, পানি ও দূষিত হয়। দূষিত পানি বা পচা খাবার থেকে আবার অনেক সময় অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপন থেকেও ডায়রিয়া হয়। ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে  খুব দ্রুত  পানি এবং ইলেক্ট্রোলাইট বের হয়ে গিয়ে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুর ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এতে বেশি আক্রান্ত হয় শিশুরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, সারাবিশ্বে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর পেছনে দ্বিতীয় কারণ এটি। ডায়রিয়ার  উপসর্গ হলো ঘন ঘন  পাতলা পায়খানা, পেট ব্যথা, দুর্বলতা, পেশি ব্যথা,  মাথাব্যথা।

এক্ষেত্রে ঔষধ হলো খাবার স্যালাইন।অনেকে রাইস স্যালাইন ও  খান। এগুলো যে কোন ফার্মেসিতে পাওয়া যায়। কিন্তু নিজের ইচ্ছেমতো বানালে চলবেনা। প্যাকেটের গায়ে যে নিয়ম বলা আছে হুবুহু সেটা মেনেই বানাবেন। আমার যখন ডায়রিয়া হয় আমি যেটা করি আধা লিটার এমন এক বোতল নরমাল পানিতে পুরো এক প্যাকেট স্যালাইন গুলিয়ে ফেলি। এবং 12 ঘণ্টা পর্যন্ত এটি খাওয়ার উপযোগী থাকে। তবে রোগের যদি বমি হয়, প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায়, জিহ্বা শুকিয়ে যায় তখনই দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিতে হবে। এগুলো মারাত্মক পানিশূন্যতার লক্ষ্যণ।সেখানে ইনজেকশনের মাধ্যমে রোগীকে স্যালাইন দেয়া হতে পারে।

গলা ব্যাথা, জ্বরঃ

 অনেকেই আছেন যারা অফিসে  বা গাড়িতে এসি ঠাণ্ডা পরিবেশে থাকেন। কিন্তু সেখান থেকে বেরোতেই বাইরের গরম আবহাওয়ার হলকা লাগে। আবার গরম থেকে বাঁচতে অনেকে বাড়ি ফিরে গোসল ঢুকে পড়েন। না হলে ঘামে ভেজা শরীরে এসির ঠান্ডায় বসে পরেন। এ ঠান্ডা থেকে গরমে আবার গরম থেকে হঠাৎ ঠাণ্ডা পরিবেশে গেলে ওই পরিবর্তনের সাথে শরীর মানিয়ে নিতে পারে না। তাই অনেকে সর্দি, কাশি, গলাব্যথা, জ্বরে আক্রান্ত হন  তবে এ ধরনের সমস্যা সাধারণত কয়েকদিন পরে ঠিক হয়ে যায় বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। তীব্র গরমে যেসব অসুখ হয়

এক্ষেত্রে সমাধান হলো ঠান্ডা থেকে সরাসরি তীব্র রোদে যাওয়ার আগে শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা স্বাভাবিক করে নিন। যেমন থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি ঘর বা করিডোরে কিছু সময় দাঁড়িয়ে তারপর বের হন। গাড়ি থেকে নামার আগে এসিটা বন্ধ করে নিন গরমে ঘামে ভেজা অবস্থায় সরাসরি গোসলে বা এসিতে না গিয়ে ফ্যানের বাতাসে কিছুটা ঠান্ডা হয়ে নিন।

অন্যান্যঃ

 অতিরিক্ত গরমে রক্তনালীগুলো খুলে যাওয়ার কারণে ত্বকে ফুসকুড়ি চুলকানি এবং গোড়ালি ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়াও প্রচুর ঘাম হওয়ার কারণে শরীরে পানি ও লবণের পরিমাণ কমে যায়, এভাবে শরীর সোডিয়াম ও পটাশিয়াম এর ভারসাম্য হারায় বা ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্স হয়। এর ফলে মাথা ঘুরানো  ভীষণ দুর্বলতা, শরীর নিস্তেজ হয়ে যাওয়া, 

অজ্ঞান হয়ে পড়া, মাথাব্যথা, কাশির  মতো সমস্যা দেখা দেয়। আবার গরমে পানিও খাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। দেখা যায় অনেক দূষিত পানি, শরবত বা খোলা ফলমূল খেয়ে পেট ব্যথা হচ্ছে। এসব এর প্রভাবে জন্ডিস, টাইফয়েড, হেপাটাইটিসের মত রোগ হতে পারে। তীব্র গরমে যেসব অসুখ হয়

গরম থেকে বাঁচতে কি করবেন?

সবচেয়ে জরুরি হলো তীব্র রোদ, বিশেষ করে সকাল 11 টা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত সূর্যের সরাসরি তাপ এড়িয়ে চলতে হবে  বাইরে যদি যেতে হয় তাহলে ছাতা, হ্যান্ড, সানগ্লাস হাত-পা ঢাকা হালকা  রঙের ঢিলেঢালা সুতির পোশাক পরতে হবে। এমন কাপড় শোষণ করে এবং বাতাসের চলাচল স্বাভাবিক রাখে। আরেকটি বিষয়, দিনের বেলা আপনি বাইরে যান ভেতরে থাক আপনি নারী কিংবা পুরুষ অবশ্যই ত্বকে সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন। কেননা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের ক্যান্সারের জন্য দায়ী। গরমে সবচেয়ে জরুরি হলো প্রয়োজনমতো পানি খাওয়া। অনেকেই আছেন ডায়রিয়া বা অন্য কোন সমস্যা ছাড়াই প্রচুর স্যালাইন খান। এ ক্ষেত্রে সতর্ক হোন। অপ্রয়োজনে স্যালাইন শরীরের মারাত্মক 

ক্ষতি করে। তাই স্যালাইন যদি খেতে হয় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। গরমে কফি, অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলবেন। এগুলো শরীর থেকে পানি দ্রুত বের করে দেয়। চেষ্টা করুন মৌসুমী রসালো ফল ও সবজি বেশি করে খেতে। ফাস্টফুড, ভাজাপোড়া খাবার,  পুরনো বাসি খাবার, বাইরের খাবার একদম এরিয়ে যেতে হবে। প্রতিদিন অন্তত একবার ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করুন। তবে হ্যাঁ তীব্র গরম থেকে সরাসরি গোসলে না গিয়ে শরীরকে ঠান্ডা হওয়ার মত সময় নেন। আপনার ঘরের যে জানালা দিয়ে সরাসরি রোদ আসে সেখানে মোটা হালকা রঙের পর্দা দিয়ে রাখুন। তীব্র গরমে যেসব অসুখ হয়

ঐ পর্দায় কিছুক্ষণ পরপর পানি স্প্রে করতে পারেন।  আর যে জানালা দিয়ে বাতাস আসে, রোদ সরাসরি পড়ে না সেই জানালাটা খুলে রাখুন। ঘরে যদি এসি না থাকে, তাহলে ফ্যানের সরাসরি নিচে পানির বালতি রাখুন,এটি ঠাণ্ডা ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করবে। চেষ্টা করুন ইলেকট্রনিক পণ্য যেমন কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল, আয়রন যত কম ব্যবহার করা যায়। কেননা এগুলো তাপ উৎপাদন করে। ব্যাস এ কটি বিষয় সর্তক থাকলে বলা যেতে পারে এই গ্রীষ্মের প্রখর তেজ মোকাবেলায় আপনি প্রস্তুত। এমন নানা ধরনের কনটেন্ট পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে। এছাড়া আপনারা আর কি ধরনের কনটেন্ট পেতে চান সে বিষয়ে আমাদেরকে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না । তীব্র গরমে যেসব অসুখ হয়

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular