Thursday, September 19, 2024
HomeHEALTH & FITNESSক্যান্সার: ওভারিয়ান বা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার ও সিস্ট সম্পর্কে যা জানা জরুরী

ক্যান্সার: ওভারিয়ান বা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার ও সিস্ট সম্পর্কে যা জানা জরুরী

নারীরা সাধারণত যে ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন তার মধ্যে একটি হলো, ওভারিয়ান ক্যান্সার বা ডিম্বাশয় ডান্সার। তবে সাধারণত পঞ্চাশোর্ধ নারীরা এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। বাংলাদেশ ওভারিয়ান ক্যান্সার এ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও, এই নিয়ে তেমন কোনো গবেষণা এখনো হয়নি। তবে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, 15 থেকে 20 শতাংশ নারী জিনগত কারণে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। জিনগত কারণ ছাড়াও অন্য যে কোন কারনে ওভারিয়ান ক্যান্সার এ আক্রান্ত হতে পারেন। নারীদের জরায়ু দুই পাশে একটি করে মোট দুইটি ওভারে বা ডিম্বাশয় থাকে। ডিম্বাশয়ের কাজ হলো, ডিম্বাণু এবং ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন নামে দুই ধরনের হরমোন তৈরি করা। প্রত্যেকটি ওভারি ৩ ধরনের কোষ দিয়ে তৈরী, আর এই কোষগুলো থেকে বিভিন্ন ধরনের টিউমার হতে পারে।

ওভারিয়ান ক্যান্সারের লক্ষণঃ

ক্যান্সার ডিম্বাশন সংক্রমিত করে এবং যতক্ষণ পর্যন্ত পেলবিক জোনে এবং পেটের না ছাড়ায় ততক্ষণ পর্যন্ত এটি বুঝা যায়না। চিকিৎসকদের মতে, এ ক্যান্সারের প্রাথমিক উপসর্গ একেবারে নেই বললেই চলে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রাথমিকপর্যায়ে ব্যথা হয়না। তারপরও যে লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলা হয়, তার একটি হল ক্ষুধামন্দা।

ওভারি বা ডিম্বাশয় ক্যানসারের অন্যতম লক্ষণ হলো:

১.হঠাৎ করে ক্ষুধা কমে যাওয়াঃ
পেট সবসময় ভরা ভরা লাগে, তবে ভরপেট এর অনুভূতি শুধু ডিম্বাশয় ক্যানসারের জন্য যে হবে তাকে তো নয়। হজমে সমস্যার জন্য এমনটা হতে পারে।
২.কোমরে ব্যথা বা লোয়ার ব্যাকপেইনঃ
কোমরের নিচের দিকে চিনচিন ব্যথা, বা এর থেকেও তীব্র কোন ব্যথা অনেক দিন ধরে হতে থাকে। তাহলে সেটা ওভারিয়ান ক্যান্সারের লক্ষণ হিসেবে ধরে নিতে হবে। এছাড়াও ওভারিয়ান ক্যান্সারের অন্যতম লক্ষণ হলোঃ
” পিরিয়ড বা মাসিকের সমস্যা”
পিরিয়ড ছাড়া অন্য সময় রক্তপাত হওয়া এই ক্যান্সারের আরেকটি লক্ষণ। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, অনেক সময় সিস্ট এর জন্য অনিয়মিত পিরিয়ড হতে পারে।

এছাড়াও আর যেসব লক্ষণ আছে ঃ

কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া, এছাড়াও হঠাৎ ওজন কমতে শুরু করা, দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়া, যৌনমিলনের সময় ব্যথা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। তাই এই ধরনের এক বা একাধিক লক্ষণ দেখা দিলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে বলা হয়।

ওভারিয়ান ক্যান্সারের ঝুঁকিতে যারা আছেন, বয়স বাড়ার সাথে সাথে ওভারিয়ান ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। মেনোপজের আগে শরীরের অতিরিক্ত ওজন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। বিভিন্ন ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট এর তথ্য অনুযায়ী, সাধারণত 40 বছরের কম বয়সীদের এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে দেখা যায় না। ওভারিয়ান ক্যান্সার এ আক্রান্ত বেশিরভাগেরই বয়স ষাটের বেশি। ৩৫ এর পর প্রথম সন্তান ধারণ বা কখনই গর্ভধারণ না করলে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি থাকে।মেনোপোজের পর হরমোন থেরাপি গ্রহণ করলে, এছাড়া পরিবারের কারো যদি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা থাকে, তাহলে অন্যদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকখানি বেড়ে যায়।

ওভারিয়ান ক্যান্সারের ধরনঃ

ওভারিয়ান ক্যান্সারের ধরন

কোন ধরনের কোষে ক্যান্সার প্রথম দেখা দেয়, তার ওপর ভিত্তি করে ওভারিয়ান ক্যান্সারের ধরন নির্ধারণ করা হয়। তিন ধরনের ওভারিয়ান ক্যান্সার দেখা যায়,

১. এপিথেলিয়াল ওভারিয়ান টিউমারসঃ ওভারের বাইরের দিকে যে পাতলা আবরণী টিস্যু দিয়ে আবৃত থাকে, সেখানে এপিথেলিয়াল টিউমার এই টিস্যুতে হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ওভারিয়ান ক্যান্সারের কারণ হলো, এপিথেলিয়াল টিউমার।
২.ওভারিয়ান স্ট্রোমাল টিউমারসঃ ওভারির যে টিস্যু থেকে হরমোন তৈরি হয়, তাতে স্ত্রমাল টিউমার হয়ে থাকে।

রিসেন্ট লাইভ খবর পেতে ফলো করুন আমাদের গুগল নিউজ চ্যানেল


৩. ওভারিয়ান জাম সেল টিউমারসঃ যে কোষ থেকে ডিম্বাণু তৈরি হয়, তাকে জাম সেল টিউমার হয়ে থাকে।এর মধ্যে কিছু টিউমার থাকে যা নন ক্যান্সার, যা বাইরে ছড়ায় না। তবে যেসব ওভারিয়ান টিউমার ক্যান্সার সেখান থেকে আশেপাশের টিস্যুতে ও ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়তে পারে যা থেকে পুরো শরীরে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ে। ক্যান্সার কতটা মারাত্মক পর্যায়ে রয়েছে তা বুঝার জন্য ওভারিয়ান ক্যান্সারের 4th ধাপে ভাগ করা হয়।

প্রথম শ্রেণীঃ একটি ওভারিতে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ে।
দ্বিতীয় স্টেজঃ ওভারি থেকে তলপেটের আশেপাশে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ে।
স্টেজ ৩য়ঃ পুরো পেটে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ে। আর চতুর্থ স্টেজঃ সারা শরীরে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ে।

এ ক্যান্সার নির্ণয়ের পদ্ধতিঃ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ ক্যান্সারটি শনাক্ত হয়, অনেক দেরিতে। ততদিনে তার পেটে এবং অন্ত্রের ছড়িয়ে যায়। তবে প্রাথমিকভাবে ধরা পড়ল এবং যথাযথ চিকিৎসা হলে সেড়ে যাবার সম্ভাবনা শতকরা 90 ভাগ। ওভারিয়ান ক্যান্সার হয়েছে তা জানতে যে পরীক্ষাগুলো করা হয় সেগুলো জেনে নিন।
১. রক্তপরীক্ষা,
২. আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যানিং,
৩. ল্যাপ্রোস্কপি,
৪. কোলোনোস্কোপি,
৫.বয়োস্কেপি,
৬.সিরাম টিউমার মার্কার টেস্ট,
৭ ইমিউনোলজিক্যাল টেস্ট।

ওভারিয়ান ক্যান্সারের চিকিৎসাঃ

চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ভর করছে রোগটি কেন স্টেজে আছে, কি পর্যায়ে আছে তার উপর। রোগের ধরন বুঝে চিকিৎসকেরা সিধান্ত নেন সার্জারি করা হবে কিনা। এছাড়া যেসব চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করেন চিকিৎসকরা, তার মধ্যে আছে,
১. কেমোথেরাপি, ২. রেডিয়েশন থেরাপি, ৩. হরমোন থেরাপি, ৪. টার্গেটেড থেরাপি।

চিকিৎসকদের মতে, ওভারিয়ান ক্যান্সারের প্রধান চিকিৎসা সার্জারি। ওভারিয়ান , জরায়ু এবং টিউমার দেখা যাবে, সার্জারির মাধ্যমে ফেলে দেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষক্ষরা তবে কম বয়সে ক্যান্সার ধরা পড়লে, ওভারি ও জরায়ু রেখেই চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।

পরিমিত ঘুম ব্যালেন্সটায়েড, শারীরিক পরিশ্রম আর নিজের প্রতি একটু সচেতনতা ওভারিয়ান ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দেয়। আর এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে হতাশ না হয়ে চিকিৎসকের অনুযায়ী চলা টাই গুরুত্বপূর্ণ।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular