Wednesday, September 4, 2024
HomeRecent Live BanglaIslamic Statusকেন দোয়া কবুল হচ্ছে না

কেন দোয়া কবুল হচ্ছে না

কেন দোয়া কবুল হচ্ছে না: অনেকে মনের আশা পুরনের জন্য দোয়া কবুলের আমল খোঁজেন। কোথাও কোন আমল পেলেই পালন করা শুরু করেন তা যত কঠিনই হোক না কেন। দোয়া কবুল হওয়ার জন্য আল্লাহ তাআলা কঠিন কিছুই করতে বলেননি। তিনি শুধুমাত্র দোয়া করতে বলেছেন। খাস দিলে চাইতে বলেছেন।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব। অর্থাৎ আমার কাছে চাও আমি তোমাদের চাওয়া পূরণ করব। আমার কাছে সমস্যার কথা বল আমি সমাধান করব। আমার কাছে বিপদ থেকে মুক্তি চাও। আমি বিপদ দূর করে দিব। আমার কাছে বিচার দাও, আমি বিচার করব।

দোয়া কবুল না হওয়ার কারণ

এমনকি কোনো নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে, নির্দিষ্ট স্থানে, দোয়া করার শর্ত দেননি বরং যখনই হোক, যেভাবেই হোক তার কাছে চাইতে বলেছেন। তাকে ডাকতে বলেছেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “দোয়াই হলো ইবাদাত”। [আবু দাউদ ১৪৭৯, তিরমিযী ২৯৬৯]

“আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে সম্মানিত কোন ইবাদত নেই”। [তিরমিযী ৩৩৭০]

বৈদ কোন কিছু পাওয়ার জন্য দোয়ার উপরে কিছু নেই। হারাম বা অন্যায় কিছু পাওয়ার জন্য দোয়া করা যাবে না। আমাদের ইচ্ছা বা চাওয়া জায়েজ কিছু হতে হবে।

দোয়ার ব্যাপারে আমার নিজের কথাই বলি, আমার জীবনে যত চাওয়া পূরণ হয়েছে তার সবকিছুই স্রেফ দোয়া করে পেয়েছি এবং সত্যি বলতে ছোট থেকে বড় সহজ থেকে কঠিন, প্রায় সব চাওয়া পূরণ হয়েছে আমার। চাওয়া পূরণ হতে দেওয়ার বিকল্প কিছু আছে বলে আমার মনে হয় নি কখন। কোনো সমস্যায় পড়েছি বা কোন কিছু খুব দরকার এমনিতেই বসে বসে দোয়া করেছি। নামাজ পড়ে হাত তুলে পূর্ণ আস্থা বিশ্বাস রেখে খাস দিলে দোয়া করেছি। তারপর আল্লাহই ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তাড়াতাড়ি হোক আর দেরি করেই হোক। জীবনের সবচেয়ে বড় বিপদের মুখোমুখি হয়ে, আমি শুধু মাত্র দুটি কাজ করেছিলাম। দোয়া ও জিকির, আরেকবার সালাতুল হাজত পড়ে দোয়া করা।

আল্লাহ বিপদ সামান্য স্থায়ী হওয়ার তৌফিক দেন নি। আলহামদুলিল্লাহ! বিশ্বাস করুন, প্রতিবার দোয়া করার পর, আমি এতটা স্বস্তি পাই যেন মনে হয় আর কোন চিন্তা নেই। আল্লার কাছে চেয়েছি, এবার তিনি দিবেন। তিনি ফিরিয়ে দিতে পারেন না এবং তিনি ফিরিয়ে দেয় না।

দোয়া কবুল হওয়ার জন্য দুইটা কাজ হতে বিরত থাকতে হবে

রিসেন্ট লাইভ খবর পেতে ফলো করুন আমাদের গুগল নিউজ চ্যানেল

প্রথমত, উদাসীন অন্তর নিয়ে দোয়া না করা অর্থাৎ মুখে দোয়া করলে মনে মনে দোয়ার প্রতি পূর্ণ মনোযোগ নেই, বরং উদাস হয়ে শুধু মুখে দেওয়া আওড়ানো। এভাবে দোয়া করার কোনো মানে নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কবুল হওয়ার দৃঢ় পত্যয় রেখে তোমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করবে। জেনে রাখ, উদাসীন ও অমনোযোগী মনির দোয়া আল্লাহ কবুল করেন না।

দ্বিতীয়ত, দোয়া কবুল হতে দেরী হলে নিরাশ না হওয়া এবং এরকম বলা যে, আল্লাহ তো আমার দোয়া কবুল করলেন না। আমার দোয়া কবুল হয় না! এই অভ্যাস অনেকেরই আছে অথচ এরূপ করা মোটেই ঠিকনা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়ে থাকে, যদি সে তাড়াহুড়া না করে। সে বলে যে আমি দোয়া করলাম কিন্তু আমার দোয়া তো কবুল হলো না, আমার যে চাওয়া পূরণ হয়নি এখন, তার জন্য আমি কখনো ভাবি না যে, আমার দোয়া কবুল হয়নি বরং আমি দৃঢ় বিশ্বাস রাখি যে, সেই দোয়া কবুল হয়েছে যা চেয়েছি তা একদিন না একদিন পাবোই। আর তা না হলে, আল্লাহ আরো ভালো কিছু দিবেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন কোন মুমিন ব্যক্তির দোয়া করে, যে দোয়াতে কোনো পাপ থাকেনা ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয় থাকে না, তাহলে আল্লাহ তিন পদ্ধতিতে তার দোয়া কবুল করে নেন। যে দোয়া সে করেছে হুবহু সেভাবে তা কবুল করেন অথবা তার দুয়ার প্রতিদান আখিরাতের জন্য সংরক্ষণ করেন কিংবা দোয়া এর মাধ্যমে তার ওপর আগত কোন বিপদ দূর করে দেন। এ কথা শুনে সাহাবীগণ বললেন, আমরা তাহলে অধিক পরিমাণে দোয়া করতে থাকবো।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বল্লেন, তোমরা যত প্রার্থনাই করবে আল্লাহ তার চেয়ে আরো অনেক বেশি কবুল করতে পারেন। [বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ ও আহমদ]

যেভাবে দোয়া করা উচিত তা হল:

প্রথমতঃ দোয়া কবুল হবে এমন দৃঢ় আশা নিয়ে দোয়া করা এবং আল্লাহর প্রশংসা করতে হবে দোয়ার শুরু এবং শেষে, দরুদ পাঠ করতে হবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি।

আমি তো খারাপ, গুনাহগার তাই আমার দোয়া কবুল হবে না। দোয়া করার সময় এসব ভেবে চিন্তিত না হয়ে, আল্লাহর কাছে চেয়েছি, তিনি কখনো ফিরিয়ে দেবেন না। এমন আশা নিয়ে আল্লাহ কাছে দোয়া করতে হবে। তবে গুনাহ থেকে সরে আসা অবশ্যই জরুরি।

রাসুল (সা.) বলেছেন, ” এভাবে তোমাদের কেউ বলবে না যে – হে আল্লাহ! তুমি চাইলে আমাকে মাফ করো, তুমি চাইলে আমার প্রতি দয়া করো বরং সে যেন পূর্ণ দৃঢ়তার সাথেই দোয়া করে কেননা আল্লাহ তায়ালার উপর জবরদস্তকারী কেউ নেই”। [তিরমিযী ৩৪৯৭]

অপর একটি হাদীসে রাসুল (সা.)বলেছেন, “আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আমার বান্দার ধারণা অনুযায়ী আমি আছি। আর যখন সে আমাকে ডাকে আমি তার ডাকে সাড়া দেই”। [সহিহ মুসলিম ৬৭২২]

দ্বিতীয়তঃ দুয়ার ক্ষেত্রে হাত তুলে দোয়া করা তা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর কাছে হাত পাতলে তিনি ফিরিয়ে দিবেন না আশা করাই যায়।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক চিরঞ্জীব দানশীল, তার কোনো বান্দা দুহাত তুলে দোয়া করলে, তিনি তাকে শূন্যহাতে নিরাশ করে ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন। ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, নফল নামাজ পড়ে হাত তুলে দোয়া করা যায়। এমনিতেও হাত তুলে দোয়া করা যায় যেকোনো সময়ে।উচিৎ হল, অজু করে কিবলামুখী হয়ে দোয়া করা।

হাদীসে উল্লেখ রয়েছে, একবার এক সাহাবীর জন্য দোয়া করতে রাসূল সাঃ পানি আনতে বললেন এবং তিনি ওজু করলেন, তারপর তার দুই হাত উপরে তুলে তিনি বললেন, হে আল্লাহ তোমার প্রিয় বান্দা আমিরকে ক্ষমা করে দাও। [বুখারী ৪৩২৩]

তৃতীয়তঃ দোয়া কবুল হতে, বিশেষভাবে দোয়া কবুল হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ সময় গুলোতে দোয়া করা উচিত। রাতে দোয়া কবুল হওয়ার সুযোগ বেশি। রাতের যে কোন অংশে ঘুম হতে জাগলে, যে কোন দোয়া করা যায়। রাসুল সাঃ বলেছেন, কোন ব্যক্তি যদি রাতে ঘুম হতে জেগে এই দোয়া পড়ে –

“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু- লা শারিইকা লাহু- ওয়ালাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়া- হুয়া আলা- কুল্লি শাইইং ক্বাদিইর, সুবহানাল্লাহি ওয়া সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার,ওয়ালা হাওলা ক্বওয়াটা ইল্লা বিল্লাহ” তারপর যদি বলে আল্লাহ আমাকে মাফ করে দিন বা অন্য দোয়া করে, তাহলে তার দোয়া কবুল হয়। [বুখারী ১০৮৭]

রাতের সবচেয়ে পাওয়ারফুল সময় হচ্ছে রাতের শেষভাগ। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ প্রতিরাতে শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেন, কে আছে যে আমাকে ডাকবে! আমি তার ডাকে সাড়া দিবো, কে আছে এমন! যে আমার নিকট চাইবে আমি তাকে তা দেব। কে আছে এমন! যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করবো।

তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে দোয়া করলে খুব তাড়াতাড়ি দোয়া কবুল হয়। মনির বৈধ ইচ্ছা বা চাওয়া পূরণ হতে অথবা বিপদ-আপদ কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়ে দোয়া করাটাই যথেষ্ট। এছাড়া যে কোনো প্রয়োজন পূরণ হতে সালাতুল হাজত নামাজ পড়ে দোয়া করা যায়।

হাজতের নামাজ পড়ে দোয়া করলে তা কবুল হয়। এর বাহিরেও দোয়া কবুল হওয়ার আরো অনেক সময়ের কথা হাদীসে বর্ণিত আছে। যেমন: বৃষ্টির সময় দোয়া কবুল হয়, আযানের সময়, কুরআন খতম করার পর, জুমার দিনের শেষে দোয়া কবুল হয়। রোজাদারের দোয়া কবুল হয়,ইফতার সময় দোয়া কবুল হয়, শবে কদরের দোয়া কবুল হয়।

যে কোন বিপদের সম্মুখীন হলে, সমস্যায় পতিত হলে সমস্যার কথা ভেবে বেশি বেশি দোয়া ইউনোস পড়া উচিত। রাসুল সাঃ বলেছেন, নবী হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম মাছের পেটে থাকাকালীন যে দোয়া করেছিলেন তা হলো-

“লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহা-নাকা ইন্নি কুংতু মিনাজ জো লিমিইইন” অর্থাৎ হে আল্লাহ, তুমি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই, আমি নিশ্চয় জালিমদের দলভুক্ত”।

কোন মুসলিম ব্যক্তির দোয়া কখনো বৃথা যায় না। শুধুমাত্র এটা বুঝতে হবে যে, আল্লাহ ন্যায় বিচারক। তিনি পরম দয়ালু এবং তিনি তার কাজ পূর্ণ করবেন।

RELATED ARTICLES

2 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular