Friday, October 18, 2024
HomeRecent Live BanglaHEALTH TIPS BANGLAএলার্জি/ অ্যালার্জি: কেন হয়? আপনি কী করতে পারেন?|আপনার স্বাস্থ্য

এলার্জি/ অ্যালার্জি: কেন হয়? আপনি কী করতে পারেন?|আপনার স্বাস্থ্য

এলার্জি/ অ্যালার্জি আছে? আমাদের আলোচনার প্রতি নয়। বলছিলাম আমরা শরীরে যে এলার্জি রোগে ভুগি, সেটার কথা। এলার্জি আসলে কি? এলার্জি খুবই সাধারন একটি রোগ। এটি হচ্ছে, আমাদের দেহে কোন খাবার বা বস্তুর প্রতি যে প্রতিক্রিয়া দেখায়, সেটি এলার্জি। শিশুদের সাধারণত বেশি পরিমাণে হয়ে থাকে এলার্জি। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে এলার্জি সাধারণত সেড়ে যায়। অনেকের আবার সারাজীবন এলার্জিতে ভুগতে হতে পারে। আগে ছিল না এমন কোন খাবার বা বস্তুর প্রতি প্রাপ্তবয়স্করা নতুন করে এলার্জি তৈরি করতে পারেন। এটা খুবই স্বাভাবিক। আলার্জি সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক যে সংস্থা অর্থাৎ ওয়ার্ল্ড এলার্জি অরগানাইজেশন জার্নাল,  তাদের এক প্রতিবেদনে বলছে, যে 2018 সালে সারা বিশ্বে যত মানুষ রয়েছে তার অন্তত 30 ভাগ এলার্জি বা এর সম্পর্কিত নানা ধরনের রোগে ভুগে থাকেন। 

এলার্জি/ অ্যালার্জি কিভাবে হয়?

প্রতিটি মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকে,  একে বলা ইমেইল সিস্টেম। আমাদের এই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় যখন ঠিকভাবে কাজ করেনা,  বা আমাদের প্রতি ক্ষতিকর নয়, এমন সব জিনিসের প্রতি যখন প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করে তখনই এলার্জি হয়।  অর্থাৎ আমরা যে খাবার খাই বা আমরা যে বস্তুর সংস্পর্শে আসি, সেটা আমাদের জন্য ক্ষতিকর কিনা সেটা অনেক সময় আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বুঝতে পারেনা। এসব খাবার বা বস্তুর প্রতি তখন সে এক ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করে,যা  আসলে এলার্জি।

 আমাদের দেশে এলার্জিতে ভোগেন, এমন মানুষের সংখ্যা কিন্তু কম নয়। এলার্জিতে আসলে কি হয়? এলার্জিতে হাচি থেকে শুরু করে, চুলকানি এমনকি, শ্বাসকষ্ট পর্যন্ত হতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে এই এলার্জি সামান্য অসুবিধা তৈরি করে, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে এটি সারা জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে।

এলার্জি/ অ্যালার্জির উপসর্গ কি?

 যে বস্তুর প্রতি আপনার অ্যালার্জি আছে, সাধারণত সে বস্তুর সংস্পর্শে আসার কয়েক মিনিটের মধ্যেই শরীরে এলার্জি প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তবে এটি অনেক সময় কয়েক ঘণ্টা ধরে হতে পারে। তবে আশার কথা হলো, বেশিরভাগ এলার্জির মৃদু এবং নিয়ন্ত্রণে থাকে। মাঝে মাঝে এলার্জির কারণে মারাত্মক ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে, একে বলা হয় অ্যানাফিল্যাক্সিস। এছাড়াও এলার্জির কারণে প্রধানত যে উপসর্গগুলো দেখা যায় তার মধ্যে অন্যতম, হাচি, চুলকানি, সর্দি এবং বন্ধ নাখ।

চোখে চুলকানি, লাল হয়ে যাওয়া, পানি পড়া সাধারণত দেখা দেয়। এছাড়াও আছে শ্বাস নেওয়ার সময় বুকে শব্দ হওয়া, বুক ভারি হয়ে যাওয়া, শরীর লাল হয়ে ফুলে যাওয়া। আমার মনে হয় এটা সবারই হয় এমন কেউ নেই যে, অভিজ্ঞতা হয়নি কখনো।  এছাড়া ঠোঁট, জিহ্বা, চোখ, এবং মুখ ফুলে যাওয়া এলার্জিক বেশ বড় ধরনের লক্ষণ। এছাড়াও আছে ত্বক শুকিয়ে যাওয়া বা লাল হয়ে কেটে যাওয়া।

তবে আপনার কোন বস্তুতে এলার্জি রয়েছে এবং আপনি কিভাবে তার সংস্পর্শে এসেছেন, সেটার উপর নির্ভর করে যে আপনার অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া টা কেমন  হবে।আপনার যদি ফুলের রেণুতে এলার্জি থেকে থাকে, তাহলে আপনার হাচি বা সর্দি কাশি হতে পারে।  আপনার যদি  ত্বকের এলার্জি হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে র‍্যশ হয়ে,  লাল হয়ে ফুলে উঠবে।আর যদি এলার্জি/ অ্যালার্জি রয়েছে এমন কোন খাবার আপনি খেয়ে ফেলেন তাহলে আপনি সাথে সাথে বা কিছুক্ষণ পর বা যখন প্রতিক্রিয়া শুরু হবে তখন আপনি অসুস্থ হয়ে যাবেন।

অ্যানাফিল্যাক্সিসের উপসর্গ কি?

 এ ধরনের অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া কয়েক মিনিটের মধ্যে হয়। এবং সেটা কখনো কখনো প্রাণঘাতী হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই অনেক বেশি সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। দেখা যাক,যে এই উপসর্গগুলো আসলে কি? গলা এবং মুখ ফুলে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট হওয়া, ঘুম ঘুম ভাব হওয়া বা জ্ঞান হারানোর মত অবস্থা হওয়া  প্রলাপ বকতে থাকা, ঠোঁট  এবং ত্বক নীল হয়ে যাওয়া। পড়ে যাওয়া বা জ্ঞান হারানো। তবে জ্ঞান হারানো বা পড়ে যাওয়ার মতো ঘটনা খুব একটা দেখা যায় না।

রিসেন্ট লাইভ খবর পেতে ফলো করুন আমাদের গুগল নিউজ চ্যানেল

এলার্জি হলে কি করবেন?

 আপনার যদি মনে হয় যে, আপনার এলার্জি/ অ্যালার্জি আছে,, তাহলে  সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। তাকে বলতে হবে যে, কোন কোন বস্তুর প্রতি আপনার এলার্জিক সমস্যা রয়েছে, সেগুলো কিভাবে সংস্পর্শে আসলে আপনার অ্যালার্জি হয়, এলার্জি হলে সেটা কতক্ষণ থাকে এবং কতবার করে হয়, সেটিও বুঝিয়ে বলতে হবে।  আপনার লক্ষণ এবং উপসর্গ এবং আপনার যে জিনিসের প্রতি এলার্জি রয়েছে, সেটা পর্যবেক্ষণ করে আপনার চিকিৎসক আপনাকে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা দিয়ে থাকেন। তবে কোনো কারণে যদি এলার্জির উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের টেস্ট করানো যেতে পারে।এসব টেস্ট আসলে কি? এসব ও একবার দেখে নেয়া যাক। 

১.স্কিন প্রিক টেস্টিংঃ এক্ষেত্রে আপনার হাতে ত্বকের উপরে কোনোই এক জায়গায়, যে বস্তুতে আপনার অ্যালার্জি রয়েছে, সেই বস্তুর উপাদান সমৃদ্ধ একটি তরল দেয়া হয়। পরে সেখানে আলতোভাবে একটি ছিদ্র করা হয়, তারপরে দেখা হয় যে আপনার অ্যালার্জি আছে কিনা। আপনার যদি এলার্জি থেকে থাকে তাহলে 15 মিনিটের মধ্যে আপনার হাতের সেই জায়গা ফুলে উঠবে৷

২.রক্ত পরিক্ষাঃ অনেক সময় স্কিন প্রিক টেস্টিং এর সাথে বা এর পরিবর্তে রক্ত পরীক্ষা করা হয়, এটা জানতে যে আপনার আসলে এলার্জি রয়েছে কিনা। 

৩.পেট টেস্টঃ

 এতে আপনার অ্যালার্জি রয়েছে, এমন উপাদান একটি ধাতব ডিস্ক এর সাথে লাগিয়ে সেটি আপনার শরীরের কোন অংশে বেঁধে দেয়া হয়, তারপর 48 ঘন্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয় যে আসলে ওই উপাদানের প্রতি আপনার সত্যি সত্যি এলার্জি হয়েছে কিনা। 

৪.এলিমিলেশন ডায়েটঃ 

এক্ষেত্রে আপনার যে খাবারের প্রতি এলার্জি রয়েছে  সে খাবার খেতে না করা হয়। তারপর নির্দিষ্ট সময় পার হলে

আবার খেতে বলা হয়, যে ঐখাবারের প্রতি  তখন আপনার শরীর কি ধরনের প্রতিক্রিয়া দেয় সেটি জানতে। তবে মনে রাখতে হবে, এই পরীক্ষা কখন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া করা যাবে না। 

৫. চ্যালেন্জ টেস্টিংঃ

 এক্ষেত্রে আপনার যে খাবারের প্রতি এলার্জি রয়েছে, সেই খাবার একটু একটু মাত্রা বাড়িয়ে দেয়া হয়। এটা দেখতে যে,  এ খাবার  আসলে আপনার শরীর সহ্য করতে পারে কিনা। তবে এই পরীক্ষার ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে হাসপাতাল থেকে তারপর করতে হবে। 

সবশেষে আলার্জি টেস্টিং কিটঃ বাজারে বিভিন্ন ধরনের এলার্জি টেস্টিং কিট পাওয়া যায়, তবে বেশিরভাগ সময়ে সেগুলো যথার্থ মানের হয়না।

এলার্জির চিকিৎসা কি?

এলার্জির চিকিৎসা ব্যাক্তি ভেদে ভিন্ন হয়, কারণ সবার  এলার্জি প্রতিক্রিয়া এক হয় না। তবে আলার্জি যদি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়, সেক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ অবলম্বন করা যেতে পারে। যাদের খাবারে অ্যালার্জি রয়েছে, তারা অবশ্যই খেয়াল রাখুন যে আপনি কী খাচ্ছেন? যাদের জীবজন্তুতে এলার্জি রয়েছে, তাদের যদি পোষা প্রাণী থেকে থাকে, তাহলে পোষা প্রাণী কে যতটা সম্ভব ঘরের বাইরে রাখুন এবং তাদেরকে নিয়মিত গোসল করান। ছত্রাকে যাদের এলার্জি রয়েছে, তারা যথাসম্ভব ঘর শুকনো রাখুন এবং পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা রাখুন।

পরাগরেণু তে যাদের অ্যালার্জি রয়েছে, তারা ঘাস জন্মায় এমন এলাকায় এড়িয়ে চলুন। বাতাসে যদি অনেক বেশি পরাগরেণু থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার করুন। যদি সেটিতেও কাজে না দেয় তাহলে ঘরে থাকাটাই ভালো। আর যাদের ডাস্ট মাইড বা ধূলিকণা এলার্জি রয়েছে, তারা এলার্জি রোধে কাঁথা, বালিশ ব্যবহার করুন। ঘরের মেঝেতে কার্পেটের পরিবর্তে কাঠের মেঝে ব্যবহার করুন৷  এসব সর্তকতা ছাড়াও বাজারে বিভিন্ন ধরনের এলার্জির ওষুধ পাওয়া যায়।  তবে এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে,, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ধরনের ওষুধ সেবন করা যাবে না।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular